টার্গেট শিক্ষিতরা, খেটে খাওয়া মানুষেরা চেনেন না মেয়র প্রার্থীদের!
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৩৪:৫৪,অপরাহ্ন ২৬ এপ্রিল ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনি প্রচারণার একেবারে শেষ মুহুর্তে প্রার্থীরা। আগামী মঙ্গলবার অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনে আজ রবিবারই আনুষ্ঠানিক প্রচারণার শেষ দিন। ৭ এপ্রিল শুরু হওয়া এ নির্বাচনি প্রচারণায় এলাকায়-এলাকায় ভোট চেয়ে প্রার্থীরা ঘুরলেও মেয়র প্রার্থীদের টার্গেট সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষেরা ছিলেন না। টার্গেট ছিলেন শিক্ষিতরা। যদিও প্রচারণার বিভিন্ন ছবিতে দেখা গেছে বস্তিতে যাওয়া, রাস্তা ঝাড়ু দেওয়া, ময়লা পরিষ্কার করা, অপেক্ষাকৃত সুবিধাবঞ্চিতদের সঙ্গে হাত মেলানোর দৃশ্য। সাধারণ শ্রমিক শ্রেণি ও সাধারণ ভোটারদের দাবি, মেয়র প্রার্থীরা এলাকায় এসেছেন বটে, কিন্তু তাদের আসা-যাওয়ার কোনও ঘোষণা না থাকায় দেখা হয়নি তাদের সঙ্গে। তাদের কেউই মেয়রদের ইশতেহার বা মেয়রদের টকশোয় দেওয়া প্রতিশ্রুতির বিষয়ে কিছুই জানেন না। এমনকি অধিকাংশের কাছে লিফলেটের ভাষাও অপরিচিত ঠেকেছে। ঢাকা উত্তর সিটির বিভিন্ন এলাকার ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন নির্বাচনে দাঁড়ানো প্রার্থীরা একসঙ্গে অনেক কাজ করতে গিয়ে মাঠে কম থাকতে পেরেছেন। টেলিভিশনগুলোও তাদের প্রচুর সময় নিয়ে নিয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষেরা তাদের অভ্যাসের সিরিয়াল দেখা বাদ দিয়ে টেলিভিশনে মেয়রদের নিয়ে করা টকশো দেখবেন বা দেখেছেন, এমনটা আশা করা ঠিক হবে না।
কথা হয় রাজধানীর মিরপুর বেনারসি পল্লীর কয়েকজন সুতা-ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তাদের দাবি, এবার মেয়রদের বিষয়ে তাদের পূর্ব কোনও ধারণা নেই। বেশকিছু মিছিল তারা দেখেছেন, কিন্তু লিফলেট পড়ে বেশিরভাগ কথার মানে তারা বোঝেননি। তাদের মতে, ঢাকা বিষয়ে তাদের করণীয় কিছু নেই। চাইলে মেয়র-এমপিরাই পারেন কিছু করতে। সুতা ব্যবসায়ী তমিজউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের এই প্যারিস রোড গত পাঁচ বছর ধরে চলাচলের অযোগ্য। এলাকার এমপি সাহেব কিছু করবার পারে না, মেয়র তো এই রাস্তা চেনেই না। সে করবে কীভাবে।’ আবার ‘বাস মার্কা’ও তিনি চেনেন না। তিনি বলেন, ‘নতুন কেউ মেয়রে দাঁড়াইলে আগে মুখটা তো অন্তত চেনাবে।’
এদিকে, গুলশানের বেশকয়েকটি শপিংমলে কেনাকাটা করতে আসা কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা মেয়র প্রার্থীদের চেনেন এবং তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎও হয়েছে। পিঙ্ক সিটির এক দোকান-সহকারী সোহেল বলেন, তিনি শুনেছেন, ‘খালেদা জিয়া এসেছিলেন।’ লিফলেট আর টেলিভিশন দেখে বেশকিছু প্রার্থীকেও চেনেন। তবে সাক্ষাৎ হয়নি। তিনি বলেন, ‘প্রার্থীরা আইবো কি? তারা তো টেলিভিশনেই থাকছেন।’
মিরপুর ১০ ১১ এলাকার নিচের দিকে জেনেভা ক্যাম্প। তার পাশে যত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আছে, তাদের দোকানে উত্তরের মেয়রপ্রার্থী বা তাদের সমর্থকরা গেলেও বসতবাড়িগুলোয় হাজির হননি তারা। মিরপুর ১১ এলাকার গৃহিনী শাহীনা বলেন, ‘টেলিভিশন দেখে আন্দাজ করতে পেরেছি, কারা মেয়রপ্রার্থী, সামনা-সামনি দেখি নাই।’ তিনি বলেন, ‘আমার বাসার কাজের মেয়েটা যে বাড়িতে ভাড়া থাকে, সেখানে অন্তত কুড়িটা শ্রমিক পরিবার থাকে। তাদের কারও সঙ্গে কোনও মেয়র প্রার্থী বা মার্কা বিষয়ে কারও আলাপ হয়নি।
অনলাইন এক্টিভিস্ট বাকী বিল্লাহ বলেন, ‘যুগটা মিডিয়া আর সোশ্যাল মিডিয়ার। মিডিয়া বা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার প্রবণতাও কিন্তু মানুষের কাছে যাওয়ার ইচ্ছা থেকেই আসে। ওয়ান টু ওয়ান যোগাযোগের চেয়ে এটা বেশি কার্যকরী। আর ঢাকা শহরে আসলে এত বেশি মানুষ বাস করে যে, আরও অনেক বেশি সময় নিয়েও খুব সামান্য সংখ্যক মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব।’ তিনি তরুণ প্রার্থীদের জনসংযোগের মাত্রা বেশি ছিল উল্লেখ করে বলেন, রাজনীতিবিদরা আগের চেয়ে জনবিচ্ছিন্ন হয়েছেন বেশি। মিডিয়া বা অধুনা সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে সেটা খালি চোখেই দেখতে পারি আমরা।’ তিনি আরও বলেন, ভোটারদের জায়গা থেকে অভিযোগ ওঠার সঙ্গত কারণ রয়েছে। তারা চান নির্বাচনের আগে সব প্রার্থীই তাদের দ্বারে আসুক। যাকে সবচেয়ে ভালো মনে হবে, যাচাই-বাছাই করে যেন তাকে ভোট দিতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা আসলে তার প্রত্যাশার নাগালে অবস্থান করে না।’
এদিকে উত্তরের মেয়রপ্রার্থী আনিসুল হক বলেন, ‘আমি চেষ্টা করেছি সব জায়গায় পৌঁছার। এক্ষেত্রে বড়-ছোট কোনও ভেদাভেদের প্রশ্নই ওঠে না। সবার ভোটই আমার দরকার।’ টেলিভিশনে বেশি সময় দিতে হলো কি না, সে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই সময় দেওয়াও তো ভোটারদের জন্যই।’ উত্তরের আরেক প্রার্থী জোনায়েদ সাকি পুরো বিষয়টিকে সময়ের দাবি উল্লেখ করে বলেন, ‘যখন কম সময়ে অনেক মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে, তখন আপনাকে মিডিয়ার ওপর নির্ভরশীল হতে হবে। তবে গণমাধ্যমে অনেকবেশি সময় দেওয়ার কারণে গণসংযোগের সময় কিছুটা কমেছে বলেও স্বীকার করেন তিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরেক মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তাহীনতা কারণে অনেক জায়গায় যেতে পারিনি। কিন্তু যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি।’ তিনি বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়া খুব জরুরি একটি বিষয়। এখনকার সময়ে তরুণ সমাজকে আকৃষ্ট করতে হলে এর বিকল্প নেই।