জ্বালানি তেলে বিপর্যস্ত হতে শুরু করেছে সুন্দরবন
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:২৩:৪৬,অপরাহ্ন ১২ ডিসেম্বর ২০১৪
নিউজ ডেস্ক: পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের শ্যালো নদীতে ডুবে যাওয়া ট্যাংকারটির জ্বালানি তেলে বিপর্যস্ত হতে শুরু করেছে সুন্দরবন। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পশুর, শ্যালা, রূপসা ও বলেশ্বর নদ-নদীর প্রায় ৮০ কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। এদিকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় চড়ে ঘরের হাঁড়ি-পাতিল আর চটের বস্তা নিয়ে সুন্দরবনের শেলা নদীতে ট্যাংকার দুর্ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া তেল সংগ্রহে নেমেছেন জেলে ও স্থানীয় গ্রামবাসীরা। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানির ঠিকাদার তাদের কাছ থেকে ওই তেল কিনে নিচ্ছেন ৩০ টাকা লিটার দরে। প্রথম ৫ ঘণ্টায় এভাবে ৩৪০০ লিটার তেল কেনা হয়েছে বলে পদ্মা অয়েলের ঠিকাদার আবদুল্লাহ ট্রেডার্সের মালিক রফিকুল ইসলাম বাবুল জানিয়েছেন।
বন বিভাগের সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের চাঁদপাই স্টেশন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, আগের দিনের ঘোষণা অনুযায়ী, স্থানীয় প্রশাসন ও বনবিভাগের তত্ত্বাবধানে শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে তেল সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। শেলা নদীর জয়মনি থেকে আন্ধারমানিক পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকায় বিভিন্ন খালে এই কাজ চলছে বলে সহকারী বন সংরক্ষক বেলায়েত হোসেন জানান। তিনি বলেন, সবাই স্বতস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এসেছে। অনেক পরিবারের নারী ও শিশুরাও হাঁড়ি পাতিল নিয়ে এ কাজে নেমে পড়েছে। তেল সরানোর এ পুরো কাজ তদারক করছে বনবিভাগ, বিআইডব্লিউটিএ, কোস্ট গার্ড, নৌপুলিশ ও মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। তিনি আরও বলেন, তেল যাতে আরো ছড়াতে না পারে সেজন্য জেলেদের সহায়তায় বনরক্ষীরা বুধবার থেকেই দুর্ঘটনাস্থলের কাছে শেলা নদীর খালগুলোর মুখ জাল দিয়ে আটকে দেয়ার কাজ শুরু করেন।
অপরদিকে আজ শুক্রবার সুন্দরবনে ডুবে যাওয়া ট্যাংকার থেকে নিঃসৃত তেল অপসারণে রাসায়নিক পদার্থ ছিটানো স্থগিত রেখেছে কান্ডারি-১০। বৃহস্পতিবার দুপুরে ১০ হাজার লিটার অয়েল স্পিলড ডিসপারসেন্ট নামের ওই রাসায়নিক পদার্থ নিয়ে কান্ডারি-১০ নামের টাগবোটটি শ্যালা নদীতে পৌঁছায়। এরপর বিকেল থেকে এক দফা ওই টাগবোটটি থেকে রাসায়নিক ছিটানো শুরু হয়। কিন্তু সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কায় বন বিভাগের আপত্তিতে তা স্থগিত করা হয়। বর্তমানে কান্ডারি চাক্তাই রেঞ্জের কাছে নোঙর করে আছে।
এ বিষয়ে টাগবোটে অবস্থানরত পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক মল্লিক আনোয়ার হোসেন বলেন, এ অয়েল স্পিলড ডিসপারসেন্ট কোন দেশ থেকে আমদানি করা, এটি তৈরি ও মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার তারিখ, এর আমদানি কোড এবং রাসায়নিক নাম পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। সেখান থেকে ইতিবাচক সাড়া পেলেই এটি ছিটানো শুরু হবে। তিনি বলেন, টাগবোটের ভেতরেই খুলনা পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে আসা একজন কেমিস্ট রাসায়নিকটি পরীক্ষা করছেন। এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল ইতিবাচক হলে এক দিনেই কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। তবে, যে চ্যানেলে জাহাজডুবির ঘটনা ঘটেছে সেই চ্যানেলেই রাসায়নিকটি ছিটানো হবে। তিনি আরও বলেন, ছড়িয়ে পড়া তেল সংগ্রহের জন্য আজ সকাল থেকেই জেলে ও গ্রামবাসী কাজ করছে। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানির লোকজন ওই সংগৃহীত তেল কিনে নিচ্ছেন।
চট্টগ্রাম থেকে আসা টাগবোট কাণ্ডারি-১০ এর মাস্টার আবু বকর সিদ্দিক বলেন, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র পেলেই অয়েল স্পিল ডিসপারসেন্ট ছিটিয়ে তেল দূষণ নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু হবে। ১০ হাজার লিটার ‘অয়েল স্পিল ডিসপারসেন্ট’ নিয়ে বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাণ্ডারি-১০ ভাসমান তেলের ওপর রাসায়নিক ছিটানো শুরু করলেও বন বিভাগের আপত্তিতে তা স্থগিত করা হয়। নৌ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রফিকুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, কাণ্ডারি-১০ যে অয়েল স্পিল ডিসপারস্যান্ট নিয়ে গেছে তা ছিটিয়ে দিলে ভাসমান তেলের রাসায়নিক গঠন ভেঙে যাবে এবং ভেসে থাকা তেল পানির নিচে চলে যাবে। এতে পানির অক্সিজেন নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা কমবে।