জামায়াতের হরতালে চট্টগ্রামে সাড়া নেই
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:১৭:২৭,অপরাহ্ন ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪
নিউজ ডেস্ক::
রংপুরের আলবদর কমাণ্ডার এটিএম আজহারকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার প্রতিবাদে জামায়াতের ডাকা হরতালে বন্দরনগরীতে সাড়া মিলছেনা। হরতালের তেমন কোন প্রভাব জনজীবনে পড়েনি।
বুধবার ভোর ৬টা থেকে হরতাল শুরুর পর এ পর্যন্ত নগরীর কোথাও কোন নাশকতা কিংবা সহিংস ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। নগরীর কদমতলি, মতিয়ার পুল, জেল রোডসহ কয়েকটি এলাকায় শিবির ঝটিকা মিছিল করেছে। তবে মিছিলে নেতকার্মীর সংখ্যা ছিল হাতেগোণা।
হরতালের মধ্যেও নগরীতে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে রিক্সা, অটোরিক্সা ও টেম্পু। সিটিবাস, মিনিবাস ও হিউম্যান হলারও চলাচল করছে, তবে সংখ্যায় কম। ব্যক্তিগত যানবাহন তেমন চোখে পড়ছে না। হরতালের মধ্যে নগরীতে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক আছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
সকালে নগরীর আগ্রাবাদ বাদামতল মোড় ঘুরে দেখা গেছে, হরতালের মধ্যেও ব্যস্ততম এই পয়েন্টে গণপরিবহনের চাপ আছে। নির্বিঘ্নে যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে সিটিবাস ও হিউম্যান হলার। পণ্য নিয়ে মাঝে মাঝে বন্দরের দিক থেকে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে যাচ্ছে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানও।
তবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ আছে। কিন্তু চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে মাঝে মাঝে কিছু বাস এবং অভ্যন্তরীণ রুটের গাড়ি চলতে দেখা যাচ্ছে।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (পশ্চিম) এস এম তানভির আরাফাত বাংলানিউজকে বলেন, মহাসড়কে গাড়ি চলাচল তেমন নেই। তবে নগরীর ভেতরে গণপরিবহন চলছে। কোথাও যানবাহন চলাচলে কেউ বাধা দিয়েছে এমন খবর পাইনি।
আগ্রাবাদসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলো খোলা দেখা গেছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় তৈরি পোশাক কারখানায় পুরোদমে কাজ চলছে। শ্রমিক-কর্মচারিরাও যথারীতি নির্বিঘ্নে কাজে যোগ দিয়েছেন।
ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তম পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে অধিকাংশ দোকানপাট খোলা থাকলেও বিক্রি কম বলে জানা গেছে। নগরীর মাঝিরঘাট, বাংলাবাজার এলাকায় কর্ণফুলী নদীর ঘাট এবং বিভিন্ন গুদামে ট্রাকে পণ্য বোঝাই স্বাভাবিক নিয়মে চলছে। চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতরে পণ্য উঠানামা স্বাভাবিক থাকলেও পণ্যবোঝাই গাড়ি কম বের হচ্ছে বলে জানা গেছে।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (বন্দর) মোস্তাক আহমেদ বলেন, বন্দর এলাকায় পণ্যবাহী পরিবহন চলাচল করছে। অফিস, কারখানা সব খোলা আছে। হরতালের প্রভাব কোথাও নেই।
এদিকে চট্টগ্রাম আদালতে আইনজীবী সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হরতালের কারণে বিচার কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ আছে। বিচারকরা এজলাসে উপস্থিত থাকলেও আইনজীবীরা বিচার কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন না।
হরতালে নাশকতা মোকাবেলায় চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সহিংসতা মোকাবেলায় অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি বিজিবিও মোতায়েন আছে।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) বনজ কুমার মজুমদার বলেন, মাঠে প্রায় দুই হাজার অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে। ছয় প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন রাখা হয়েছে।
নগর পুলিশের কোতয়ালি জোনের সহকারি কমিশনার শাহ মো.আব্দুর রউফ বলেন, নাশকতা মোকাবেলার পর্যাপ্ত প্রস্তুতি আমাদের আছে। তবে এখন পর্যন্ত কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, স্পর্শকাতর পাঁচটি উপজেলায় ছয় প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন আছে। সব উপজেলায় অতিরিক্ত পুলিশ আগে থেকেই মোতায়েন আছে।
একাত্তরে মানববতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের দায়ে জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডাদেশের প্রতিবাদে বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) ও বৃহস্পতিবার (১ জানুয়ারি) হরতাল ডেকেছে দলটি। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত এ হরতাল পালন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।