ছিটমহল বিনিময় নিয়ে কলকাতার সংবাদপত্রের নীরবতা কীসের ইঙ্গিত!
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:২৫:২০,অপরাহ্ন ০৯ মে ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
অবশেষে ভারতের সংসদে পাস হল ছিটমহল বিনিময় সংক্রান্ত স্থল সীমান্ত বিল। রাজনৈতিক বাধা কাটিয়ে সবকটি দলের বিপুল সমর্থনে বিলটি সংসদের উভয় কক্ষেই পাস হয়েছে। বিলটির পাসের খবরে বাংলাদেশে ব্যাপক উচ্ছ্বাস ও আবেগ চোখে পড়েছে সাধারণ জনগণ থেকে ছিটমহলবাসীদের মধ্যে। বাদ যায়নি সংবাদমাধ্যমগুলো। ঢাকার প্রতিটি সংবাদপত্রে নয়াদিল্লির বরাত দিয়ে ব্যানার হেডলাইন দিয়ে সংবাদ পরিবেশনের পাশাপাশি ভারতীয় ছিটমহলের আনন্দমিছিলের ছবিও গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হয়েছে।
কিন্তু গত কয়েকদিনে কলকাতার শীর্ষ স্থানীয় সংবাদপত্রগুলোতে বিষয়টি নিয়ে নয়াদিল্লির সংবাদ প্রকাশিত হলেও পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিকদলগুলো বা রাজনৈতিক নেতৃত্বের কোনও মন্তব্য প্রকাশিত হয়নি। এর পাশাপাশি কোচবিহার জেলার অভ্যন্তরে বাংলাদেশি ছিটমহলে আনন্দ উৎসবের কোনও সংবাদও পাওয়া যায়নি।
পশ্চিমবঙ্গের সংবাদমাধ্যমগুলোর এই নীরবতার কারণ কী তা নিয়ে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুস্নাত দাস বলেন, বাংলাদেশ প্রশ্নে কলকাতার সংবাদপত্রের এই উদাসিনতা নতুন নয়। অতীতেও বহুবার দেখা গেছে। মহান ভাষা আন্দোলনের সংবাদও কলকাতার একটি শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্রে দুদিন পর খুব ছোট আকারে প্রকাশিত হয়েছিল ভেতরের পাতায়।
তিনি আরও বলেন, ছিটমহল সংক্রান্ত সংবাদ কোনদিনও খুব একটা গুরুত্ব দিয়ে কলকাতার সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়নি এতবছরে। প্রধানমন্ত্রী মনমোহনের সাথে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঢাকা সফর বাতিল করার পর এই বিষয়ে কিছু সংবাদ দেখে ছিলাম বলে মনে পড়ছে। তবে কেন তারা এটা করেন তা বলতে পারব না।
ছিটমহল নিয়ে উপন্যাস লিখছেন কথাসাহিত্যিক অমর মিত্র। তিনি বলেন, ছিটমহলের মানুষের অমানবিক জীবনের কথা কলকাতার ক’জন মানুষ জানেন? সংবাদপত্রগুলো এনিয়ে কখনই গুরুত্ব দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেনি। যা কিছু সংবাদ পাওয়া যেত তাও উত্তরবঙ্গ থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিক থেকে। ছিটমহল বিনিময়ের দাবিতে ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ ছিটমহল বিনিময়ের দাবিতে ২৮দিন আমরণ অনশন করেছিলেন ছিটমহল বিনিময় কমিটির নেতা দীপ্তিমান সেনগুপ্ত সেই খবরও কলকাতার সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়নি। এই বিষয়টি নিয়ে হয়তো তারা উৎসাহী নন।
এ তো গেল সংবাদপত্রের কথা। ছিটমহলবাসীরা নীরব কেন? এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন পোয়াতেরকুঠি ছিটমহলের সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, ‘নীরব কোথায়! শুক্রবার আমরা একটা বিজয় মিছিল করেছি ছোট আকারে। দেখুন এতগুলো বছর পরে আমাদের আন্দোলন সফল হয়েছে। তার জন্য ভালো লাগছে। আমাদের ভারতের নাগরিক হওয়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।’
তিনি বলেন, ‘তবে আনন্দে ভেসে গিয়ে নয়, এখনও অনেক কাজ বাকি। আন্দোলন শেষ। এবার শুরু করতে হবে ছিটমহলগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ। সড়ক, বিদ্যুৎ, পানীয় জল, স্কুল, কলেজ তৈরি করতে হবে। এর পাশাপাশি ভারতীয় ছিটমহল থেকে যারা আসবেন তাদের পুনর্বাসনের কাজ করতে হবে। যদিও এই কাজগুলো ভারতীয় প্রশাসন করবে, কিন্তু আমাদের নজরদারি রাখতে হবে,যাতে কেউ বঞ্চিত না হন।
কমিটি সূত্রে জানা গেছে, ছিটমহল বিনিময়ের আন্দোলনের সংগঠন বিনিময় সমন্বয় কমিটির শীর্ষ নেতা দীপ্তিমান সেনগুপ্ত স্ত্রী সুভদ্রা রায়ের চিকিৎসার জন্য চেন্নাইয়ে অবস্থান করছেন। তিনি ফিরলে আগামী ২৬ জুন বিজয় উৎসব করার পরিকল্পনা নিয়েছেন তারা।
সূত্র : ট্রিবিউন