গ্রেফতার আতঙ্কে মান্না, আছেন গোয়েন্দা নজরে
প্রকাশিত হয়েছে : ২:১৯:৫৪,অপরাহ্ন ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
সম্প্রতি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে গোপন আলোচনার অডিও ফাইল ফাঁস হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। গোয়েন্দদের নজরে পড়েছেন তিনি। আছেন গ্রেফতার আতঙ্কে । আবার গণধোলইয়ের হুমকিও দিয়েছে ছাত্র সংগঠনের নেতারা। একইসঙ্গে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে। এসব কিছু নিয়ে বেশ বিপত্তিতেই পড়েছেন দেশের নাগরিক সমাজের এই গুণী নেতাকে।
সম্প্রতি মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে একজন রাজনৈতিক নেতা ও অজ্ঞাত একজনের ফোনালাপের রেকর্ড গোয়েন্দা সংস্থার বরাতে প্রকাশ করেছে কয়েকটি গণমাধ্যম। এ নিয়ে গতকাল থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ দেশের সকল পত্র-পত্রিকাও নিউজ চ্যানেলগুলো সংবাদ পচারের গরম গরম উপাদান খুজে পেয়েছে। এর ফলে রাজনীতির মাঠ এখন বেশ উত্তপ্ত।
বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা সাদেক হোসেন খোকা ও এক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির সঙ্গে গোপন ফোনালাপের বিষয় সরাসরি স্বীকার না করলেও ফেসবুকের নিজস্ব পাতায় জোড়ালো পতিক্রয়া জানিয়েছেন মহমুদুর রহমান মান্না।
তিনি বলছেন, দেশের এই যুগসন্ধিক্ষণে কারও চরিত্র হননের কাজ এই সঙ্কটকে আরও ঘনীভুত করবে। ঘটনার বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, সামগ্রিক ঘটনায় আমি বিস্মিত, দুঃখিত, মর্মাহত। এ পর্যন্ত আমার রাজনীতি জীবনে কখনও সহিংসতা, ষড়যন্ত্রকে প্রশ্রয় দেইনি। আমার অতীত ইতিহাস সাক্ষ্য দেবে। যে দুটো সাক্ষাৎকার ছেপেছে পাঠকদের অনুরোধ করবো যেন ভালো করে সেটা শোনা এবং পড়ে দেখার। কোথাও কোন ষড়যন্ত্রের গন্ধ নেই, উস্কানি নেই।
গোপনে যে ফোনালাপ হয়েছে তা স্বীকার করে মান্না বলছেন, সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে আমার আন্দোলনের বিষয়ে আলাচনা হয়েছে। আমি তাকে বলেছি, গণতন্ত্রের দাবিতে আমি আন্দোলনে সমর্থন করি। সহিংসতা সমর্থন করি না। এ থেকে বেরিয়ে আসার জন্যে ব্যাপক জনগণকে সংযুক্ত করার চেষ্টা করা উচিত। সহিংসতা দায়িত্ব নিয়ে বর্জন করা উচিত।
ফোনালাপে তার বক্তব্যকে বিকৃত কার হয়েছে দাবি করে মান্না বলেন, এ আন্দোলনে এখনও ছাত্ররা অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। এ জন্যই বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ছাত্র আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত ও বিস্তৃত করতে হবে। এটা করতে গিয়ে যদি পুলিশি বা সন্ত্রাসী হামলায় দু’চার জনের জীবনও যায় কিছু করার নেই। এমনিতেই তো মানুষ মরছে। আমার এই বক্তব্যকে বিকৃতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যেন আমি লাশ চাই।
রাজনীতি করতে গেলে সবার সঙ্গেই যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে হয় এমনটা উল্লেখ করে মান্না তার পতিক্রয়ায় জানান, একইভাবে সেনাবাহিনীর কোন কোন কর্মকর্তা আমার সাথে কথা বলতে আগ্রহী হলে বলব কি না সে কথা জানতে চাইলে, আমি বলেছি রাজি আছি। আমি রাজনীতি করি সবার সঙ্গে কথা বলতে হয়। এটা থেকে এক এগারো বা সামরিক কু’য়ের ষড়যন্ত্রের আবিষ্কার হয় কিভাবে? যেখানে এরকম কোন বৈঠকই হয়নি।
ফাঁস হয়ে যাওয়া এই ফোনালাপের বিষয় নিয়ে চলছে দেশজুড়ে চলছে সরগরম আলোচনা। এ বিষয়ে সোমবার মন্ত্রীসভায় গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে। নাগরিকসমাজের ভাবমূর্তিও আজ হুমকির মুখে পড়েছে। আর এসব নিয়ে বেশ বিপাকেই পড়তে হচ্ছে মান্নাকে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ গোয়েন্দাদের নজরদারিতে রয়েছেন নাগরিক ঐক্যের এই আহ্বায়ককে। শোনা যাচ্ছে যে কোন মুহুর্তেই হতে পারেন গ্রেফতার। এমন আশঙ্কা মান্না নিজেই গণমাধ্যকে জানিয়েছেন। অপরদিকে, ছাত্রসংগঠনগুলো প্রশ্ন তুলছে তার রাজনৈতিক আলাপচারিতার বিষয়ে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগও তাকে গণধোলাইয়ের হুমকি দিয়েছে। সকল শিক্ষাঙ্গনে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে।
গণমাধ্যমে ফাঁস হওয় ফোনালাপের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এক বিক্ষোভ সমাবেশে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম এসব ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, মাহমুদুর রহমান মান্নাকে যেখানেই পাওয়া যাবে সেখানেই গণধোলাই দেয়া হবে।
এসময় মাহমুদুর রহমান মান্নাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কুলাঙ্গার বলে আখ্যায়িত করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর শরীফ। একই সঙ্গে তিনি ঢাবি প্রশাসনের কাছে মান্নার সার্টিফিকেট বাজেয়াপ্ত করার দাবিও জানান।
একটি জাতীয় দৈনিক ও অনলাইনে মাহমুদুর রহমান মান্না ও বিএনপি শীর্ষ নেতা সাদেক হোসনে খোকা এবং এক অজ্ঞাত ব্যক্তির সঙ্গে ভাইবারে কথা বলার অডিও রেকর্ড ফাঁসের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় সোমবার। প্রতিবেদন প্রকাশের পরই সরকারের ওপর মহল ক্ষুব্ধ হয় এবং তার ওপর নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়। যে কোন সময় গ্রেফারের নির্দেশ আসতে পারে বলেও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
ফাঁস হওয়া সেই ফোনালাপের বিষয়ে অনেকেই ধারণা করছেন যে, ওয়ান ইলেভেনের মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে সেনা হস্তক্ষেপে ভূমিকা রাখার আগ্রহ রয়েছে মান্নার। আর যার সঙ্গে তিনি কথা বলেন সেই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিও ১/১১ সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। সংলাপে সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ দুই কর্মকর্তার (লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদমর্যাদা) সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনাও করা হয়।