খালেদার ৫টি গোপন মোবাইল বার্তা ফাঁস (অডিও)
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:০৩:৫০,অপরাহ্ন ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
অনলাইন ডেস্ক :: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মোবাইলে গোপন কথোপকথনের ৫টি অডিও রেকর্ড ফাঁস করেছে ‘বাংলা লিকস’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল। এই নিয়ে আজ সোমবার মন্ত্রিসভায় তোলপাড় হয়েছে। সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে খালেদা জিয়ার ৫টি মোবাইলে গোপন কথোপকথনের অডিও বার্তা শোনানো হয়। এসব অডিওতে খালেদা জিয়াকে বিভিন্ন নির্দেশ দিতে শোনা যায়। সেসব নিয়ে আলোচনা করে তার ফোন ও ইন্টারনেটে বিঘ্ন ঘটানো যৌক্তিক ও জনকল্যাণমূলক বলেও মন্তব্য করা হয় বৈঠকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৪ বছর আগে ঢাকায় বিএনপির একটি সমাবেশের সময় দলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কয়েকটি টেলিফোন সংলাপের অডিও টেপ ঘুরছে ইউটিউবে, যাতে তাকে নেতাদের নানা নির্দেশ দিতে শোনা যায়। খালেদার এসব নির্দেশ নাশকতা ঘটনোর উদ্দেশ্যেই-এমন কথা রয়েছে বলে অডিও ফাইলগুলোর শিরোনামে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০১১ সালের ১৮ ডিসেম্বর ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে সারাদেশ থেকে জনসমাগমের প্রস্তুতি নিয়েছিল বিএনপি। অনুষ্ঠানস্থল ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সকালে আগতদের পুলিশ লাঠিপেটা করে বের করে দিলে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ বাঁধে এবং তা ছড়িয়ে পড়ে অন্য জেলাগুলোতেও। ঢাকায় বোমা বিস্ফোরণে একজন মারা যায়, পোড়ানো হয় কয়েকটি গাড়ি। সিলেটে বাসে আগুন দেওয়া হলে পুড়ে মারা যান এক যাত্রী।
বাংলা লিকস খালেদার যে ৫টি কথোপকথন প্রকাশ করেছে, তার চারটিই ওই সমাবেশ শুরুর আগে কয়েকজন নেতার সঙ্গে খালেদার কথোপকথন শোনা যায়। খালেদা জিয়া ছাড়াও বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমান, সাদেক হোসেন খোকা, মারুফ কামাল খান ও খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের দুজন কর্মচারীকেও টেলিফোনের অন্যপ্রান্তে নাশকতা চালানোর নির্দেশ দেওয়া সম্বলিত কথোপকথন পাওয়া যাচ্ছে ইউটিউবটির ওই একাউন্টে। এর আগেও একাউন্টটিতে যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, শমসের মবিন চৌধুরী-তারেক রহমান, এম কে আনোয়ার, জয়নাল আবদীন ফারুকের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক আলাপের অডিও টেপ আপলোড করা হয়। নিম্নে অডিওগুলোর তথ্য এবং ইউটিউবে প্রকাশ হওয়া ভিডিওগুলো নিম্নে ধারাবাহিকভাবে দেওয়া হলো।
প্রথম কথোপকথন
[youtube]e9JulMuErMk[/youtube]
প্রথম অডিওতে অন্য প্রান্ত থেকে খালেদা জিয়ার কাছে জানতে চাওয়া হয়- “ম্যাডাম, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রোগ্রামটা কি অন থাকবে?” তখন খালেদাকে বলতে শোনা যায়- “এখন পর্যন্ত অন থাকবে। কিন্তু ওখানে কেউ থাকবে না। ছেলে-পেলেরা সব রাস্তায় থাকবে। ভেতরে কাউকে আমি দেখতে চাই না। ছেলেরা সব রাস্তায় যাবে।” ঢাকা মহানগর বিএনপির তৎকালীন আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালামকে ‘লোক নামানোর’ নির্দেশও দিতে শোনা যায় খালেদাকে। “খোকা আর সালামকে বলে দেন, বেশি করে লোক নামাতে। ওরা যদি লোক নামাতে না পারে, দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিক। আমি রাস্তায় লোক দেখতে চাই।” এরপর খালেদাকে বলতে শোনা যায়- “আপনি কি ওদের সঙ্গে কথা বলেছেন।” অন্য প্রান্ত থেকে যখন ‘জ্বি’ বলে আরও কিছু বলা শুরু হয়, তখন তাকে থামিয়ে দেন বিএনপি চেয়ারপারসন। “না না, ওই যে, অন্যদের, আপনি যাদের সঙ্গে কথা বলেন। ওরা এখনো নামেনি কেন?…আরও নামাতে বলেন। “আমাদের লোকজনদের বল, সব প্রেস ক্লাব ও ইঞ্জিনিয়ার (ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন) ছেড়ে রাস্তায় চলে যাও। কাউকে আমি ওখানে দেখতে চাই না। ওখানে শুধু মুক্তিযোদ্ধা যেগুলো আসছে, ওগুলো থাকবে। আর সব রাস্তায়।”
দ্বিতীয় কথোপকথন
[youtube]9P-jrYvRiXo[/youtube]
দ্বিতীয় কথোপকথনে তৎকালীন মহানগর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালামকে খালেদা বলেন,
-কি, খবর পেয়েছ কিছু?
-হ্যঁ
-যত পারো লোক পাঠাও, বুঝছ কিনা?
-আমি বলতেছি ওদেরকে
-তাড়াতাড়ি করো, যত্ত পারো তাড়াতাড়ি লোক পাঠাও। দেরি কইরো না, দেরি করলে অসুবিধা হয়ে যাবে। বুঝছ?
-জ্বি
-আচ্ছা ঠিক আছে
তৃতীয় কথোপকথন
[youtube]jNr6Wgt_9lA[/youtube]
তৃতীয় কথোপকথনে বিএনপির জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীকে সক্রিয় করতে একজনকে নির্দেশ দেন খালেদা।
খালেদা: আপনি প্রেসক্লাবে চলে যান, বুঝছেন?
অন্যপ্রান্ত: জ্বি
-আর জামায়াতকে বলেন, ওদের লোকজন নামাই দিতে বলেন। শুধু ঢাকায় না, সব জায়গায়। সব জায়গায়, বুঝছেন?
-জ্বি ম্যাডাম
-… আর মৃদুলকে বলেন যে ও ওর জায়গাটা ভাল করে করতে।
-জ্বি ম্যাডাম
চতুর্থ কথোপকথন
[youtube]r_27DIKGZZg[/youtube]
চতুর্থ কথোপকথনটি খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাদেক হোসেন খোকার। খালেদা বলেন, আপনি কই?
-প্রেসক্লাবের সামনে ম্যাডাম
-আচ্ছা ঠিক আছে।
-আপনার কমিশনারদের বলুন, যার যার এলাকায় নিয়ে যাক। রাস্তাগুলো ব্লক করে দিক আর কী।…এলাকা ভিত্তিক।
-জ্বি ম্যাডাম
-আচ্ছা ঠিক আছে।
পঞ্চম কথোপকথন
[youtube]C6kYvBryjKE[/youtube]
পঞ্চম কথোপকথনটিতে চট্টগ্রামের গোলাম আকবর খন্দকারের সঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি নিয়ে কথা বলেন, যাতে নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেনের নাম এসেছে। ডা. শাহাদাত দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
খালেদা জিয়াকে বলতে শোনা যায়, আকবর সাহেব, কোথায় আপনি?
-আমি চিটাগাংয়ে
-আচ্ছা শোনেন, অমি শাহাদাতকে বলেছি, একটা কাজের দায়িত্ব দিয়েছি। খসরু যেনো কোনোভাবেই কোনো কাজে বাধা না দেয়। খসরুকে এই মেসেজ দেন।
– আ…………..চ্ছা……………………….ম্যাডাম…
-দরকার নেই। আমি কোনো কথা শুনতে চাইনা। আপনি বেশি কথা বলেন কেন? বেশি কথার কোনো দরকার নাই। আমি আপনাকে যা বলছি সেটা বলেন। আপনি কোনো কথা বলবেন না বুঝছেন কিনা?
-ওকে ঠিক আছে ম্যাডাম।
-বলে দেন যে, কোনো কাজে বাধা দিবে না। কোনো কাজে যদি বাধা দেয়, তাহলে আমি ইমিডিয়েটলি রিমুভ করব তাকে। বুঝছেন কিনা?
-ঠিক আছে ম্যাডাম। অলরেডি আমি অর্গানাইজ করতেছি।
-সে বাধা দিচ্ছে। আপনি যেটা বললাম সেটা বলেন। অন্য কোনো কথা আমি শুনতে চাইনা।
-জ্বি ম্যাডাম, এই মেসেজটা আমিই দিয়েছি।
-আপনি ডিপ্লোম্যাট ছিলেন। কিন্তু ইউ ডেন্ট নো হাই টু টক। (গোলাম আকবর খন্দকার খালেদার শাসনামলে ওমানের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন)
-ম্যা…….ডাম
-আপনি কোনো কথা বলবেন না, বুঝছেন কিনা?