খালেদার বক্তব্যে হতাশ চট্টগ্রামবাসী
প্রকাশিত হয়েছে : ২:২৯:৫৩,অপরাহ্ন ১৩ মার্চ ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
এ বছরের ছয় জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া হরতাল-অবরোধে সাধারণ মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠে। এ থেকে মুক্তি চায় সাধারণ মানুষ। তাই তিপ্পান্ন দিন পর বিরোধী জোট নেত্রী খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনকে ঘিরে ছিল সাধারণ মানুষের আগ্রহ ও প্রত্যাশা। আশা করেছিলেন মুক্তি মিলবে এ অনিশ্চয়তার। কিন্তু আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণায় হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা।
শুক্রবার বিকালে ঢাকার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোট নেত্রী খালেদা জিয়া বলেন,‘যৌক্তিক পরিণতিতে না পৌঁছানো পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’ তার এ ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী ও খেটে খাওয়া মানুষেরা।
চাকতাই শিল্প ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জামাল হোসেন বলেন,‘খালেদা জিয়ার বক্তব্যে আমরা হতাশ। আশা করেছিলাম তিনি চলমান হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার করে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিবেন। তা না করে উল্টো আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তা সত্যি দুঃখজনক। আন্দোলন চালিয়ে কি তিনি সরকার পতন করতে পারবেন?’
তিনি বলেন,‘মানুষ এ অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি চাই বলে তার সংবাদ সম্মেলনের প্রতি আগ্রহ ছিল। কিন্তু তিনি সাধারণ মানুষের ভাষা বুঝতে পারেননি। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা বুঝতে পারেননি। তাই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা বাণিজ্য ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাবে। আমদানি-রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
কাজির দেউড়ি এলাকায় চায়ের দোকানে বসে খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলন শুনেছেন সিএনজি অটোরিকশা চালক আনোয়ার। তিনি বলেন,‘হরতাল-অবরোধতো কেউ পালন করছে না। শুধু আন্দোলনের নামে মানুষকে আতঙ্কে রেখে লাভ কি। না খেয়ে মানুষতো ঘরে বসে থাকতে পারবে না। দিনের বেলা নিশ্চিন্তে গাড়ি চালালেও রাতে পেট্রোলবোমার আতঙ্কে থাকি।’
আশকার দীঘিরপাড় এলাকার গৃহিণী শারমিন ইসলাম বলেন,‘ছেলেদের স্কুল, কোচিং সব বন্ধ। আর কতদিন ঘরে বসে থাকবে ছেলেরা। স্কুল খোলা থাকলেও পাঠাতে ভয় লাগে। কখন ককটেল ফুটে। মনে করেছিলাম খালেদা জিয়া আজকে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিবেন। কিন্তু তা তিনি দেননি। আমরাতো কোন রাজনীতি করি না। আমাদের জিম্মি করে কি লাভ।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আজিজ উদ্দিন বলেন,‘তাদের আন্দোলনতো কোন ফল বয়ে আনছে না। তারা ব্যর্থ হয়েছে। শুধু আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার নামে সাধারণ মানুষকে কষ্ট দেওয়ার কোন অর্থ হয় না। আমরা অনিশ্চিত জীবন থেকে মুক্তি চাই। আপনারা ক্ষমতার জন্য কামড়াকামড়ি করবেন। এ জন্য আমাদেরকে কেন ভুগতে হবে।’ এদিকে খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনের পর চরম হতাশা প্রকাশ করে বিবৃতি পাঠিয়েছেন দেশের ভোগ্যপণ্যের সর্ববৃহৎ বাজার খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। বিবৃতিতে খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলেন,‘দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি হরতাল অবরোধ প্রত্যাহার না করায় চরম হতাশ ব্যবসায়ীরা।’
নেতারা বলেন,‘দীর্ঘ দুই মাসের অধিক সময় ধরে হরতাল অবরোধের কারণে দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ-চাক্তাইয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বেচাকেনা নেমে এসেছে প্রায় শূন্যের কোটায়। বেচাকেনা না হওয়ায় প্রতিদিনই লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীরা দেওলিয়া হওয়ার উপক্রম। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়া হরতাল অবরোধ প্রত্যাহার করবেন এমন আশা করেছেন ব্যবসায়ীরা । কিন্তু তিনি তা না করে হরতাল অবরোধ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন।’ হরতাল ও অবরোধের মত কর্মসূচি প্রত্যাহার করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
বিবৃতিদাতা ব্যবসায়ীরা হলেন- খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবুল বশর চৌধুরী, সহ-সভাপতি মীর আবদুচ সালাম, সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহম্মদ, সহ-সাধারণ সম্পাদক আহমদ রশিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মদ জামাল হোসেন, বন্দর বিষয়ক সম্পাদক স ম বখতেয়ার, প্রচার সম্পাদক মনোরঞ্জন সাহা। বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোটের হরতাল-অবরোধ চলাকালে চট্টগ্রামে পেট্রোলবোমায় দগ্ধ হয়ে মারা যান চারজন। পেট্রোলবোমা ও ককটেল হামলায় অন্তত অর্ধশতাধিক দগ্ধ ও আহত হয়েছেন।