ক্যানসার যন্ত্র আবিষ্কারক বিজ্ঞানি ড. জহিরুলকে সিলেটে সংবর্ধনা
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:০৩:১৩,অপরাহ্ন ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪
অবনী নাজমিন ::
প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার শনাক্তকরণ যন্ত্র আবিষ্কারের ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য বিজ্ঞানী ড. জহিরুল আলম সিদ্দিকীকে সংবর্ধনা দিয়েছে ‘হাওর উন্নয়ন সংস্থা’। গতকাল শুক্রবার রাতে সিলেট সিটি করপোরেশনের হলরুমে তাঁকে এ সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। ড. জহিরুল আলম সিদ্দিকী সুনামগঞ্জের কৃতি সন্তান। তিনি দীর্ঘ দিন থেকে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যানসার বিষয়ে গবেষণা কাজ করে আসছেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশি বিজ্ঞানী জহিরুল আলম সিদ্দিকী ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ান রিসার্চ কাউন্সিল থেকে আর্থিক অনুদান পেয়ে ‘ন্যানোশিয়ারিং’ নামে এমন এক ধরনের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন, যার মাধ্যমে মানব রক্তের অভ্যন্তরে অবস্থিত অতি বিরল এক ধরনের কোষ (সার্কুলেটিং টিউমার সেল বা সিটিসি) সুনির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করতে সমর্থ হয়। তাঁর এই আবিষ্কার আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির জার্নালসহ কয়েকটি বিখ্যাত জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এবং তিনি ইতিমধ্যে এই আবিষ্কারের প্যাটেন্ট লাভ করেছেন। পরে ন্যানোশিয়ারিং পদ্ধতির ভৌত গুণাবলী আবিষ্কারের জন্য গত বছরের শেষ দিকে জহিরুল অস্ট্রেলিয়ান রিসার্চ কাউন্সিল থেকে অনুদান পান। এ সংক্রান্ত অধিকতর গবেষণা এবং গবেষণাটি সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য করতে সম্প্রতি তিনি অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল হেলথ অ্যান্ড মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল থেকেও আর্থিক অনুদান পেয়ে কাজ করছেন।
জহিরুলের জন্ম সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার জয়শ্রী গ্রামে। তাঁর বাবা আবদুল হাকিম তালুকদার ও মা মজলিছুন নেছা তালুকদার গ্রামের বাড়িতেই থাকেন। এক মেয়ে ও এক ছেলের জনক জহিরুল। স্ত্রী-সন্তানসহ অস্ট্রেলিয়াতে স্থায়ীভাবে থাকেন। সম্প্রতি দেশে এলে গতকাল শুক্রবার সিলেটে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সংবর্ধনার শুরুতে জহিরুলকে সংবর্ধনা ক্রেস্ট দেওয়া হয়। হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজার সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহউদ্দিন সিরাজ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সিলেটের সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মো. সালেহ উদ্দিন আহমদ, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক উদ্দিন ও সিলেট চেম্বারের সাবেক সহসভাপতি নাসিম হোসাইন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠান মূলত তাঁর কাজকে অনুপ্রাণিত করছে জানিয়ে জহিরুল বলেন, ‘দেশের মানুষের কাছে সহজলভ্য হবে এমন একটি যন্ত্রের মাধ্যমে প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার শনাক্তকরণ যন্ত্র উদ্ভাবনের স্বপ্ন নিয়ে আমি ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ান রিসার্চ কাউন্সিল থেকে আর্থিক অনুদান পাই। এই অর্থায়ন আমার গবেষক দলকে নিয়ে এই ডিভাইস তৈরি করেছি, যার মাধ্যমে মানব রক্তের অভ্যন্তরে অবস্থিত অতি বিরল এক ধরনের কোষ (সার্কুলেটিং টিউমার সেল বা সিটিসি) সুনির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করা যায়। যেটি প্রাথমিক পর্যায়ের ক্যানসারের সুনির্দিষ্ট তথ্য বহন করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্যান্সার যখন ধরা পড়ে, তখন করার কিছুই থাকে না। অথচ প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে ক্যানসার ভালো হয়।’
ড. জহিরুল আলম সিদ্দিকী আরো জানান, তাঁর উদ্ভাবন সাধারণ মানুষের ব্যবহারোপযোগী করার কাজে ব্যস্ত তিনি। নিজের দেশ বাংলাদেশের কথা বিবেচনায় রেখে এখন তাঁর লক্ষ্য ডিভাইসটিকে সাধারণ মানুষের ব্যবহারোপযোগী করে তোলা।