কুলাউড়ায় কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম চলছে স্কুলের টয়লেট রুমে!
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:৫৬:৪৫,অপরাহ্ন ০৫ মার্চ ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
কুলাউড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনসাধারণের একমাত্র স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া সৈয়দপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের নিজস্ব ভবনের কাজ দীর্ঘ ১৫ বছরেও সম্পন্ন হয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় বর্তমানে ক্লিনিকটির স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চলছে বিদ্যালয়ের টয়লেট রুমে। সরেজমিন অনুসন্ধানে গিয়ে জানা যায়, কুলাউড়া সদর ইউনিয়নের সৈয়দপুরে ২০০০ সালে ৫ শতক ভূমির উপর সৈয়দপুর কমিউনিটি ক্লিনিক ভবনের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করা হলেও আজ অবধি নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। বরং সরেজমিনে দেখা যায় ভবনটির অবস্থা খুবই নাজুক, যেকোন সময় ধসে পড়তে পারে ভবনটি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে কাজ করায় এবং নির্মাণকাজ অসম্পূর্ণ রেখে চলে যায়। ভবনের দেয়ালে বিশাল ফাটল দেখা দিয়েছে। ছাদের অবস্থাও আরো জরাজীর্ণ। ভবনের ভিতরে বাঁশঝাড়। যেন এক পরিত্যক্ত বাড়ি।
এদিকে ক্লিনিকের নিজস্ব কার্যালয়ের নির্মাণ কাজ দীর্ঘদিনেও শেষ না হওয়ায় ইউনিয়নের শাহসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের ৫ ফুট প্রশস্থ টয়লেট রুমে বসে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালাচ্ছেন হেল্থ প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) মোঃ আমিনুল ইসলাম। তার সাথে স্বাস্থ্য সহকারি সৈয়দা আলেয়া বেগম ও এফডব্লিউএ আছমা বেগম এই ক্লিনিকের অধীনে নিয়োজিত থাকলেও তাদের কাউকে সেখানে পাওয়া যায়নি। তাদের ব্যাপারে জানতে চাইলে সিএইচসিপি মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, তারা বর্তমানে ফিল্ডে কর্মরত রয়েছেন। চিকিৎসা নিতে রোগীরা এলে বসার জায়গা না থাকায় তাদেরকে বারান্দায় বসে থাকতে হয়। সৈয়দপুর গ্রামের বাসিন্দা কৃষক আব্দুল হান্নান হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা নিম্ন আয়ের দরিদ্র মানুষ। শহরে গিয়ে চিকিৎসা করানো প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠে আমাদের জন্য। বাড়ির কাছে ক্লিনিক হলে অত্যন্ত সহজে ও কম খরচে চিকিৎসা করানো যাবে। কিন্তু আজও ক্লিনিকের বিল্ডিংয়ের কাজ শেষ না হওয়ায় স্কুলের ভিতরে অবস্থিত ক্লিনিকে ছুটে যাই বিপদে-আপদে। অসুখ-বিসুখে ঠিকমতো সেবাও পাইনা।
কমিউনিটি ক্লিনিকের হেল্থ প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) মোঃ আমিনুল ইসলাম জানান, তিনি কর্মস্থলে যোগদানের পর প্রথমে ক্লিনিকের ভূমিদাতার বাড়িতে বসে এক মাস কার্যক্রম চালিয়েছেন। পরে বিদ্যালয়ের টয়লেটের রুমে বসে তিন বছর ধরে চালিয়ে যাচ্ছেন ক্লিনিকের কার্যক্রম। প্রতিদিন আশেপাশের গ্রাম থেকে গড়ে ৪০-৪৫ জন চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। কিন্তু অস্বাস্থ্যকর ছোট এই ঘরে বসে চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। বিষয়টি তিনি কর্তৃপক্ষকে বারবার অবহিত করলেও কার্যত কোন উদ্যোগ নেই।
সর্বশেষ তিনি গত বছরের ডিসেম্বরে ক্লিনিকের ভবন পুনঃনির্মাণের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার মাধ্যমে আরসিএইচসিআইবি প্রকল্পের অতিরিক্ত সচিব ও প্রকল্প পরিচালকের বরাবরে (স্মারক নং-উপঃস্বাঃকমঃ কুলা/২০১৪/২০৬৫/৩) লিখিত আবেদন করেন। শাহ সুন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক ও ক্লিনিকের ভূমিদাতা প্রণয় কুমার পাল জানান, প্রথমে তিনি তার বাড়িতে ক্লিনিকের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য জায়গা দেন। কিন্তু দীর্ঘদিনেও ক্লিনিক ভবনের নির্মাণ শেষ না হওয়ায় এবং বাড়িতে স্থান সংকুলান থাকায় পরবর্তিতে বিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়।
শাহ সুন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল কাইয়ূম জানান, এলাকাবাসীর স্বার্থে ক্লিনিকের কার্যক্রম যাতে বন্ধ না হয় সেই বিবেচনায় স্কুল কর্তৃপক্ষ তিন মাসের জন্য অস্থায়ীভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেন। কিন্তু তিন বছরেও ক্লিনিকের ভবনের কাজ শেষ না হওয়ায় বিদ্যালয়ের ভেতর একই সাথে শিক্ষা কার্যক্রম ও চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হিমশিম খেতে হয়। এ ব্যাপারে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ শাহজাহান কবির চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ক্লিনিকের সংস্কারের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জানিয়েছি। অচিরেই এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আমি আশা করছি।