কায়সারবাহিনী প্রধান কায়সারের বিরুদ্ধে আনীত ১৬ অভিযোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:৪৫:৫৯,অপরাহ্ন ২২ ডিসেম্বর ২০১৪
নিউজ ডেস্ক:: মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জাতীয় পার্টির সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মামলার রায়ের জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
সোমবার চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আদেশ দেন।
একাত্তর সালে গঠিত কায়সারবাহিনীর প্রধান সৈয়দ কায়সারের বিরুদ্ধে ৯ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৮টি অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। এর মধ্যে তিনটি অভিযোগ একত্র করে ১৬টিতে রূপান্তর করে অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল।
অভিযোগ-১ এ বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিল বেলা দেড়টা থেকে বিকেল ৩টার মধ্যে ব্রাহ্মনবাড়িয়া(তৎকালীন কুমিল্লা মহকুমা) সদরের পুলিশ ফাঁড়ি, ইসলামপুর গ্রামের কাজীবাড়িতে শাহজাহান চেয়ারম্যানকে হত্যা, নায়েব আলীকে জখম এবং বাড়িতে লুটপাট করে।
অভিযোগ-২ এ বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিল আনুমানিক বিকেল ৫/৬টার দিকে হবিগঞ্জ জেলার (তৎকালীন মহকুমা) মাধবপুর বাজারের পশ্চিমাংশ ও পাশ্ববর্তী কাটিয়ারায় লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী। এতে কামিনী রায়, বিরোদ বিহারী মোদক, শচীন্দ্র রায়, হীরেন্দ্র রায়, রতি বাবু, অহিদ হোসেন পাঠানের দোকানসহ প্রায় ১৫০টি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অভিযোগ-৩ এ বলা হযেছে, একই দিন ৭টা থেকে সোয়া ৭টার দিকে হবিগঞ্জ জেলার(তৎকালীন মহকুমা) মাধবপুর থানার কৃষ্ণনগর গ্রামের অহিদ হোসেন পাঠান, চেরাগ আলী, জনাব আলী, মধু সুইপারকে হত্যা করে। এবং তাদের বাড়িঘরে লুটপাট করার পর অগ্নিসংযোগ করে।
অভিযোগ-৪ : সৈয়দ কায়সার ও তার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৮ এপ্রিল সকাল আনুমানিক ১০টা থেকে বেলা আড়াইটার মধ্যে হবিগঞ্জ জেলার(তৎকালীন মহকুমা) মাধবপুর থানার মাধবপুর বাজারের উত্তর পূর্ব অংশে, উত্তর মাধবপুর, সাদত বাড়িতে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করে। এসময় তারা পূর্ব মাধবপুরের আব্দুস সাত্তার, লালু মিয়া ও অজ্ঞাত বরকত আলীকে হত্যা করে। এবং কদর আলী জখম করে।
অভিযোগ-৫ এ আব্দুল আজিজসহ ৭ জনকে আটক, নির্যাতন করে হত্যা।
অভিযোগ-৬ এ ডা. সালেহ উদ্দিন আহমেদসহ ২ জনকে আটক, নির্যাতন ও হত্যা।
অভিযোগ-৭ এ এনএনএ মোস্তফা আলীর বাড়িসহ ৪০/৫০টি বাড়িঘর, দোকানপাটে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ-৮ এ এক সাঁওতাল নারীকে ধর্ষণ।
অভিযোগ-৯ আব্দুল আজিজসহ ৯ জনকে হত্যা।
অভিযোগ-১০ এ শাহ ফিরোজ আলীকে অপহরণ, আটক, হত্যা ও সাবু মিয়াকে অপহরেণ, আটক, নির্যাতন।
অভিযোগ-১১তে গোলাম রসুল ও তার পরিবারকে নির্যাতন, গোলাম রউফকে অপহরণ, আটক, নির্যাতন, মুক্তিপণ আদায়, বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ, দয়াল গোবিন্দের বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ।
অভিযোগ-১২ এ আতাব মিয়া গংদের অপহরণ, আটক, জোরপূর্বক শ্রম আদায় ও মাজেদাকে ধর্ষণ।
অভিযোগ-১৩ হচ্ছে- মহিবুল্লাহসহ ৪ জনকে অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও হত্যা।
অভিযোগ-১৪ সিরাজ আলীসহ ৪ জনকে অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও হত্যা।
অভিযোগ-১৫ নাজিম উদ্দিনকে অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও হত্যা।
অভিযোগ-১৬ বিভিন্ন গ্রামে হামলা, লুটপাট, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও ১০৮ জন গ্রামবাসীকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে।
গত বছরের ১০ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের কাছে প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুমের নেতৃত্বে প্রসিকিউশন টিম কায়সারের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন।
ওই বছরের ১৫ মে বুধবার কায়সারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। এরপর ২১ মে কায়সারকে রাজধানী অ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করে হাজির করা হলে ট্রাইব্যুনাল তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়।
এর আগে ২০১৩ সালের ২২ মে ট্রাইব্যুনাল-২ সৈয়দ মো. কায়সারের জামিন আবেদন খারিজ করে কারাগারের পাঠানোর নির্দেশ দেয়। এরপর ৩০ জুলাই কায়সারকে শর্ত সাপেক্ষে জামিন দেয় ট্রাইব্যুনাল। পরে মামলাটির কার্যক্রম সমাপ্ত করে অপেক্ষমাণ রাখার দিন তার জামিন খারিজ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর রানা দাস গুপ্ত, তাপস বল, আবুল কালাম আযাদ। অন্যদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন আব্দুস সোবহান তরফদার।