কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেছে ট্রাইব্যুনাল
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:১১:৫৪,অপরাহ্ন ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ পরোয়ানাতে স্বাক্ষর করেছেন।
বাহকের মাধ্যমে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এ পরোয়ানা জারির কপি পৌঁছে দেয়া হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া ডিসি, আইজি(প্রিজন) ও স্বরাষ্ট্র
মন্ত্রণালয়ে পরোয়ানা জারি পাঠানো হবে।
এর আগে বুধবার রাত পৌনে আটটায় আপিল বিভাগ থেকে ফাঁসির রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পৌঁছে দেওয়া হয় ট্রাইব্যুনালে। একই সঙ্গে পাঠানো হয়
ট্রাইব্যুনালের রায় ও অন্য ডকুমেন্টস, যেগুলো আপিল শুনানির জন্য পাঠানো হয়েছিল আপিল বিভাগে। ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার মোস্তাফিজুর রহমান
পূর্ণাঙ্গ রায় গ্রহণ করেন। আইন অনুসারে এরপর পূর্ণাঙ্গ রায়ের ভিত্তিতে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করবেন ট্রাইব্যুনাল-২। এরপর
জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে তা পাঠাবেন কারাগারে।
কারা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দন্ডপ্রাপ্ত আসামিকে পড়ে শোনাবেন। এরপর আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইবেন কি না অথবা রিভিউ আবেদন
করবেন কি না তা আসামির কাছে জানতে চাওয়া হবে। দন্ডপ্রাপ্ত আসামি ইচ্ছা করলে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারবেন। ক্ষমা না চাইলে ফাঁসি
কার্যকর করার ক্ষেত্রে আর কোনো বাধা থাকবে না। তবে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের দিন থেকে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করার জন্য ১৫ দিনের
সময় পাচ্ছেন আসামিপক্ষ। তারা যদি রিভিউ করেন তাহলে ফাঁসি কার্যকর প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে। রিভিউ নিষ্পত্তির পর বা রিভিউ খারিজ হলে এ
প্রক্রিয়া ফের শুরু হবে। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি (বর্তমান প্রধান বিচারপতি) এসকে সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির বেঞ্চ
কামারুজ্জামানের আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ এ রায় দিয়েছেন। বেঞ্চের অন্য তিন সদস্য হচ্ছেন বিচারপতি আব্দুল ওহাব মিয়া, বিচারপতি হাসান ফয়েজ
সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
দুপুর একটা ৫৫ মিনিটে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে ৫৭৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ করা হয়। এর আগে বেলা সাড়ে বারোটার দিকে চার
বিচারপতি রায়ে সই দেওয়া শেষ করেন। গত বছরের ৩ নভেম্বর কামারুজ্জামানকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর দেওয়া মৃত্যুদন্ডাদেশ
বহাল রেখে চূড়ান্ত রায় সংক্ষিপ্ত আকারে দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ছাত্রসংঘের ময়মনসিংহ জেলার সভাপতি ছিলেন কামারুজ্জামান। ২২ এপ্রিল তিনি জামালপুরের
আশেক-মাহমুদ কলেজের ইসলামী ছাত্রসংঘের বাছাই করা নেতাকর্মীদের নিয়ে আলবদর বাহিনী গড়ে তোলেন। বৃহত্তর ময়মনসিংহ আলবদর
বাহিনীর কমান্ডার কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে এই বাহিনী ওই অঞ্চলজুড়ে মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধ ঘটায়।
কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে এ ধরনের মোট ৭টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগগুলোর মধ্যে সোহাগপুর গণহত্যার (৩
নম্বর) অভিযোগটিতে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের (৩:১) ভিত্তিতে ওই রায় বহাল রাখেন
বিচারপতিরা। তাদের মধ্যে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী
মৃত্যুদন্ডের রায় বহাল রাখলেও বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ দেন।
অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফাকে হত্যার (৪ নম্বর অভিযোগ) দায়ে সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এ অভিযোগে
কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। অধ্যক্ষ আবদুল হান্নানকে নির্যাতন (২ নম্বর অভিযোগ) ও দারাসহ ছয় হত্যার (৭ নম্বর
অভিযোগ) দায়ে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া যথাক্রমে ১০ বছর ও যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। তবে মুক্তিযোদ্ধা বদিউজ্জামান
হত্যার (১ নম্বর অভিযোগ) দায় থেকে আপিল বিভাগ তাকে খালাস দেন। এ অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল থেকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড পেয়েছিলেন
কামারুজ্জামান। এছাড়া ৫ নম্বর (১০ জনকে হত্যা) ও ৬ নম্বর অভিযোগে (টুনু হত্যা ও জাহাঙ্গীরকে নির্যাতন) আপিল মামলার রায়েও খালাস
পেয়েছেন কামারুজ্জামান। ট্রাইব্যুনালও থেকেও এ দুই অভিযোগে খালাস দেওয়া হয়েছিল তাকে।