কানাডায় বাংলাদেশী শাফিনের সফলতা
প্রকাশিত হয়েছে : ১:০২:০৮,অপরাহ্ন ২৮ ডিসেম্বর ২০১৪
অনলাইন ডেস্ক :: ‘শাফিনের মতো হাজারো মানুষকে খুঁজে পাওয়া গেলে আমরা আরও বেশি সচ্ছল হয়ে উঠবো।’ বাংলাদেশী শাফিন মাহফুজ (৩২)কে নিয়ে এ মন্তব্য করেছেন কানাডার নোভা স্কটিয়া প্রদেশের আইনজীবী ডেভিড ক্যামেরন। রকিডিভা নামের একটি চামড়াজাত ব্যাগ উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার তিনি। বাংলাদেশে নিজ ভাইয়ের সহযোগিতায় তৈরি করে থাকেন উন্নত ধরনের ব্যাগ। এর বেশির ভাগই নারীদের পার্স হিসেবে ব্যবহার উপযোগী। সেগুলো বিক্রি করেন নোভা স্কটিয়ায়। এর মাধ্যমে নিজ দেশ বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছেন তিনি। ২০০৮ সালে যাত্রা শুরু করে ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছেন সফল এক প্রতিষ্ঠান। কানাডার সিবিসি নিউজের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে শাফিনের সাফল্যগাথা। তার এক ভাই থাকেন বাংলাদেশে। তার সঙ্গে মিলে ব্যাগগুলোর নকশা করেন। আর বাংলাদেশেই তৈরি হয় জনপ্রিয় রকিডিভা ব্যাগগুলো।
বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠেন শাফিন। নিজ দেশে কারখানা শ্রমিকদের জীবনযাত্রা কেমন তা প্রত্যক্ষ করেছেন তিনি। এ কারণেই সে ধারা উন্নয়নে তাগিদ অনুভব করেন। তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমি যেটা চালাচ্ছি সেটা ব্যবসা ঠিকই। কিন্তু একইসঙ্গে আমার মধ্যে তীব্র একটি তাগিদ রয়েছে ওই মানুষদের জন্য কিছু করার। একটা পরিবর্তন আনা এবং একটা উদাহরণ সৃষ্টি করা কেন না- এটা করা সম্ভব। ব্যাগ তৈরি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন ২০০৮ সালে। ভাড়া করা কারখানায় তৈরি করেন তার প্রথম ব্যাগ। ২০১৩ সালে শাফিন ও তার ভাই ঢাকার অদূরে ছোট একটি কারখানা গড়ে তোলেন। যথাযথভাবে যেন কারখানার কর্মপরিবেশ পর্যবেক্ষণ করতে পারেন সে বিষয়টা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রাখেন। পারিবারিক বন্ধুজনদের মধ্য থেকে ৮ জনের মতো পার্টটাইম ব্যাগ তৈরির কাজ করে। যারা কাজ করছেন তাদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করতে সচেষ্ট থেকেছেন। ৩০ থেকে ৪০ হাজার ডলার বেতন দিয়ে থাকেন শাফিন। আর এখন যে পরিমাণ লাভ করছেন তার পুরোটাই বিনিয়োগ করছেন ব্যবসায়। শাফিন ২০০২ সালে বাংলাদেশ থেকে নোভা স্কটিয়াতে পাড়ি জমান। সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসা বিষয়ে পড়াশোনা করতে সেখানে যান তিনি। নোভা স্কটিয়াতে থাকাকালীন ওই প্রদেশ আর প্রদেশটির বন্ধুভাবাপন্ন মানুষগুলোর প্রেমে পড়ে যান দ্রুতই। একইসঙ্গে নিজ দেশের প্রতি ভালবাসায়ও বিন্দুপরিমাণ কমতি ছিল না। সে কারণেই বাংলাদেশে কর্মসংস্থান তৈরি আর ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগে ভিন্নমাত্রা যোগ করতে সক্রিয় ভূমিকা রেখে চলেছেন শাফিন।
নোভা স্কটিয়ার রাজধানী হ্যালিফ্যাক্সের আইনজীবী ডেভিড ক্যামেরন ২০০৩ সালে যখন প্রাদেশিক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তখন তার সঙ্গে পরিচয় হয় শাফিনের। নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে ক্যামেরন একদিন হাজির হন শাফিনের বাসায়। শাফিন ক্যামেরনকে তার প্রচারণায় সাহায্য করার প্রস্তাব দেন। তখন থেকে দুজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ক্যামেরন শাফিনের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি মনে করেন নোভা স্কটিয়া প্রদেশে শাফিনের মতো আরও অনেক মানুষ প্রয়োজন। ক্যামেরনের প্রচারণায় কাজ করার সময় শাফিনের আরও পরিচয় হয় লিবারেল দলের প্রয়াত এমএলএ বিল গিলিসের সঙ্গে। স্নাতক সমাপ্ত হওয়ার পর নোভা স্কটিয়াতে থাকার জন্য চাকরির প্রয়োজন ছিল শাফিনের। তখন তার সহায়তায় এগিয়ে এসেছিলেন বিল। প্রয়াত আরেক স্বনামধন্য ব্যক্তি পল ও’রিগানের সঙ্গে শাফিনের পরিচয় করিয়ে দেন বিল। পল ছিলেন ও’রিগ্যান অটোমোটিভ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রেসিডেন্ট। পল তখন শাফিনকে তার প্রতিষ্ঠানে গাড়ি বিক্রেতা হিসেবে নিয়োগ দেন। শাফিন বলেন, পল ও’রিগ্যান যখন জানলেন আমি নোভা স্কটিয়াতে থাকতে চাই তিনি অনেক খুশি হয়েছিলেন। তিনি আমাকে আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন, আমাকে সহায়তা করতে নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন তিনি। পরবর্তীতে চাকরির প্রস্তাব দেন পল।
ওদিকে বিল গিলিস শাফিনকে গাড়ি চালাতে শেখান যেন তিনি ওই চাকরি নিতে পারেন। শাফিন জানালেন, চাকরি শুরু করার সময় অনেক কিছুই জানতেন না তিনি। উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন, কনভার্টেবল গাড়ি কি সেটাও জানতেন না। এখন তিনি হ্যালিফ্যাক্সের রোবি স্ট্রিটে ও’রিগ্যান ডিলারশিপের অন্যতম শীর্ষ গাড়িবিক্রেতা। রকিডিভার জন্য ব্যয় বহন করতে শাফিনকে সাহায্য করেছে এ চাকরি। রকিডিভা এখনও তুলনামূলক ছোট একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু প্রতিবছর ব্যাগ বিক্রির পরিমাণ বেড়ে চলেছে। এখন তার প্রতিষ্ঠানের হ্যান্ডব্যাগ পাওয়া যায় নোভা স্কটিয়ার চারটি দোকানে। বিক্রি হচ্ছে অনলাইনেও। শাফিনের কয়েকজন ভালো বন্ধু অনলাইন মার্কেটিং এবং বিক্রিতে তাকে সহায়তা করেছেন। শাফিনের অগ্রগতিতে ভীষণ অভিভূত ক্যামেরন। বিশেষ করে এমন একটি বাজারে মাহফুজ প্রবেশ করেছেন যেখানে খ্যাতিমান ডিজাইনারদের জয়জয়কার। ক্যামেরন বলেন, শাফিন তার দৃঢ়সংকল্পের মধ্য দিয়ে দেখিয়েছেন যে, আপনি যদি যথেষ্ট কঠোর পরিশ্রম করেন এবং যদি আপনি নিজের স্বপ্ন পূরণে ততটা দীর্ঘসময় পর্যন্ত কাজ করে যেতে পারেন, আপনার সফলতা অবশ্যম্ভাবী। সিবিসি’র প্রতিবেদনের শেষে বলা হয়, শাফিন মাহফুজ ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে। আর তার ভাবনায় রয়েছে নিজ দেশ বাংলাদেশের মানুষেরা। তিনি বলেন, সরবরাহ আর চাহিদার কারণে আমরা এখনও ফুলটাইম কর্মী নিয়োগ করতে পারছি না। একসময় তার কারখানা ফুলটাইম চলবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন যখন তিনি সেখানে আরও কর্মীদের পূর্ণকালীন কর্মসংস্থান করতে পারবেন।