করের আওতায় আসছে কওমি মাদ্রাসা
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:১৩:২৪,অপরাহ্ন ১০ এপ্রিল ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
আগামী (২০১৫-১৬) অর্থবছর থেকেই দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোকে করের আওতায় আনার পরিকল্পনা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলের সম্মতি পেলেই বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। এক্ষেত্রে সরকারের কাছে সারাদেশে কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা সংক্রান্ত কোনও তথ্য নেই। তবে বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা বোর্ড ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার (বেফাক) দেওয়া তথ্য মতে, দেশে কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা ৪৫ হাজারেরও বেশি। ছাত্রসংখ্যা তাকমিল, ফতওয়া, তাফসির বিভাগসহ প্রায় ১০ লাখ। শিক্ষকসংখ্যা প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি। স্বাধীনতার ৪২ বছরেও সরকারিভাবে এ সংক্রান্ত কোনও জরিপ হয়নি বলে কওমি মাদ্রাসা-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে গওহরডাঙ্গা কওমি মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল সাবেক কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশনের সদস্য সচিব মাওলানা রুহুল আমীন জানান, সাধারণত দেশে মাদ্রাসার হিসাব করা হয় মক্তব, হিফজখানা ও কিতাবখানাগুলোকে এক সঙ্গে করে। তিনি জানান, আমার ধারণামতে কেবল কিতাবখানার হিসেবে পরিচালিত মাদ্রাসার সংখ্যা ২০ হাজার হলেও ছাত্র সংখ্যা ও শিক্ষকসংখ্যা সঠিকভাবে নিরূপণ করা হয়নি।
জানা গেছে, মাদ্রাসাগুলো সরকারের কাছ থেকে কোনও অনুদান নেয় না। দেশব্যাপী এই মাদ্রসাগুলো চলে বিপুল পরিমাণ চাঁদা ও বিভিন্ন মানুষের দেওয়া দানে। মাদ্রাসাগুলো পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্টরা চাঁদা তোলেন। এছাড়া বিভিন্ন প্রকার দান গ্রহণ করেন। এখানকার এই আয়েরও কোনও হিসাব নাই। সারা বছর এই ৪৫ হাজার মাদ্রাসা কত টাকা চাঁদা তোলে, কোথায় খরচ করে তার কোনও হিসাব তারা কাউকেই দেয় না। কেউ চায়ও না। অডিটও হয় না মাদ্রাসাগুলোর আয়-ব্যয় নিয়ে। সরকারি নজরদারিতেও নেই এই মাদ্রাসাগুলোর আয়-ব্যয়। কওমি মাদ্রাসা পরিচালনার নামে পাওয়া অর্থ আয়করমুক্ত বলে অন্যখাতে বিশেষ করে জঙ্গি তৎপরতায় ব্যবহার হয়- এমন অভিযোগও রয়েছে।
জানা যায়, এসব কারণেই কওমি মাদ্রাসার নামে তোলা চাঁদা ও দানের অর্থের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে চায় সরকার। সে লক্ষ্যেই এই আয় কীভাবে করের আওতায় আনা যায়, তা নিয়ে কাজ শুরু করেছে এনবিআর। প্রথমে মাদ্রাসাগুলো পরে মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ও শিক্ষকদের আয়-ব্যয় খতিয়ে দেখা হবে। তাদের জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করারও পরিকল্পনা করছে এনবিআর। বিভিন্ন এলাকায় কর্মরত আয়কর কর্মকর্তারাই ওই এলাকার মাদ্রাসাগুলোর ওপর প্রাথমিক এ কাজটি করবে। তারাই মাদ্রাসা ও মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ও শিক্ষকদের আয়-ব্যয় ও জীবনযাত্রার মান সম্পর্কে অবহিত হবেন। পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত অনুসারে কাজ করবে আয়কর বিভাগ। সঙ্গে শিক্ষা বিভাগকে যুক্ত করা যায় কি না, তা নিয়েও ভাবছে সরকার। রাজস্ব বোর্ড সূত্র এ তথ্য জানায়।
এ প্রসঙ্গে দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোকে খুবই বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। যে আয়ের কোনও হিসাবপত্র সরকারের কাছে নেই বলেও জানান তিনি। এ সব মাদ্রাসার আয়ের উৎস সম্পর্কে সরকারের অবহিত থাকা প্রয়োজন। এখানকার অর্থ দেশে জঙ্গি তৎপরতায় ব্যয় হয় কি না, তাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, তারা সরকারের কাছ থেকে কোনও বরাদ্দ নেয় না। তারা তাদের আয়ের উৎসও কাউকেই জানায় না। তারা তাদের আয়ের ওপর সরকারকে ট্যাক্সও দেয় না।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান জানান, সামনে বাজেট, এখনই সুস্পষ্ট করে সব বলা ঠিক হবে না। রাজস্ব বাড়াতে সরকার সব কিছুই করা হবে। দেশের এবং জনসাধারণের শান্তিশৃঙ্খলা নষ্ট করে এমন যেকোনও আয়ের উৎস খতিয়ে দেখা সরকারের দায়িত্ব।
অর্থমন্ত্রীর এমন মন্তব্য প্রসঙ্গে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খান লেন, ‘অর্থমন্ত্রী মুহিত নিজেই বিপজ্জনক। তার এই বক্তব্য অযৌক্তিকও বটে। এই বক্তব্যে কওমি মাদ্রাসার কিছুই হবে না। কত সরকার আসে যায়, কত কথা বলে। কওমি মাদ্রাসা নিয়ে কত কী করতে চায়। আল্লাহর রহমতে এখন পর্যন্ত কওমি মাদ্রাসা নিয়ে কেউ কিছু করতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না।’
এ প্রসঙ্গে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী কওমি মাদ্রাসা সম্পর্কে জানেন না বলেই এমন মন্তব্য করেছেন। মাদ্রাসা বিপজ্জনক নয়, বরং আল্লাহর দুনিয়ায় মাদ্রাসা হচ্ছে মানুষের জন্য বিপদমুক্তির জায়গা।’ অর্থমন্ত্রী ‘বাস্তবতাবিরোধী কথা বলেছেন’ বলেও মন্তব্য করেছেন হাফেজ মাওলানা ইউনুছ। অর্থমন্ত্রীর এই বক্তব্য ‘প্রত্যাহার করা উচিত’ বলে মনে করেন তিনি। ‘প্রয়োজনে আলেমদের সঙ্গে কথা বলে কওমি মাদ্রাসা এবং এর আয়-ব্যয় সম্পর্কে অর্থমন্ত্রীর পরিষ্কার ধারণাও নেওয়া উচিত।’