নিউজ ডেস্ক:: কখনও তিনি মন্ত্রী, আবার কখনও মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব (পিএস)! এমন পরিচয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের ফোন করতেন তিনি। সুপারিশ করতেন কিডনি রোগে আক্রান্ত এক ব্যক্তিকে মোটা অঙ্কের অর্থ সহায়তা দেওয়ার জন্য। এভাবে গত পাঁচ বছরে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই প্রতারক। তার নাম রমাপদ ভট্টাচার্য ওরফে শংকর।
এ ছাড়া মানুষকে লন্ডন পাঠানোর নামেও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বুধবার বিকেলে রাজধানীর গুলশান-১ নম্বরের ডিএনসিসি মার্কেট এলাকা থেকে এক সহযোগীসহ তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেফতার অন্যজন হলেন তন্ময় চক্রবর্তী। এ সময় তাদের কাছ থেকে নগদ এক লাখ ১০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।
ডিবি উত্তর বিভাগ সূত্র জানায়, কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য সাহায্যের নামে প্রতারণা করে আসছিলেন রমাপদ। তিনি বর্তমান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী এবং তার ব্যক্তিগত সচিবের স্বাক্ষর-সিল জাল করে চিকিৎসার ভুয়া সনদ এবং সাহায্যের আবেদনপত্রে নিজেই সুপারিশ করে ব্যাংক-বীমাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ডাকযোগে পাঠাতেন।
পরে নিজেই মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব পরিচয়ে সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তাব্যক্তিদের কাছে ফোন করে বলতেন, ‘মন্ত্রী মহোদয় কথা বলবেন।’ এরপর তিনিই কণ্ঠস্বর পাল্টে মন্ত্রী পরিচয়ে চিকিৎসা বাবদ অর্থ সহায়তা দেওয়ার জন্য তদবির করতেন। অনেক সময় মন্ত্রীর পরিচয়ে এসএমএস পাঠিয়েও অর্থ দেওয়ার সুপারিশ করতেন। প্রতিষ্ঠানগুলোও যাচাই না করে ভুয়া কল-এসএমএসের ওপর ভিত্তি করে সাহায্যের আবেদনে উল্লিখিত ব্যাংক হিসাব নম্বরে টাকা পাঠিয়ে দিত।
ডিবির সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ২০১৪ সালে রমাপদ ভট্টাচার্য কিডনি রোগে আক্রান্ত হন। সে সময় তার চিকিৎসার জন্য সাহায্য চেয়ে কয়েকটি পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর ফলে তিনি কিছু আর্থিক সহায়তাও পান। পরে তিনি এ নিয়ে প্রতারণা শুরু করেন। চিকিৎসার নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে সহায়তা নেওয়া তার পেশায় পরিণত হয়। এ ক্ষেত্রে তিনি তার এলাকার এমপি ও জাতীয় সংসদের তৎকালীন হুইপের নাম ব্যবহার করতেন।
গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে পাওয়া টাকা ছাড়াও তিনটি মোবাইল ফোন, একটি পোর্টেবল হার্ডডিস্ক, পরিবেশ মন্ত্রীর জাল স্বাক্ষর সংবলিত ‘জরুরি অনুরোধপত্র’, ব্যবহূত চেক বই, মন্ত্রীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সিল, ভুয়া আবেদন পাঠানো ও টাকার হিসাব রাখায় ব্যবহূত টালি খাতা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় গুলশান থানায় একটি মামলা হয়েছে।