এসএসসি ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি, নির্বিকার প্রশাসন
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:৫৬:১৬,অপরাহ্ন ১৪ নভেম্বর ২০১৯
নিউজ ডেস্ক:: ২০২০ সালে অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন নবীগঞ্জের বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ। সরকারি প্রতিবছর ফি’র পরিমাণ নির্ধারিত করে দেয়। এর ধারাবাহিকতায় এবারও সরকার ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। তবে সেই নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে, কোচিং ফি, কেন্দ্র ফিসহ নানা খাত দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে।
স্কুল ভেদে ৪ হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকাও নেয়া হচ্ছে। এতো ফি বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের কোচিংসহ নানা খাত দেখিয়ে দেন। আর কেউ যদি এতে সন্তুষ্ট না হয়ে ফের জিজ্ঞেস করেন তাহলে রেগে যান স্কুলের শিক্ষক। এভাবেই লাগামহীন ভাবে অভিভাবকদের পকেট কাটা হচ্ছে। অথচ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস বলছে অভিযোগ দেয়নি কেউ।
আর অভিভাবকরা বলছেন, সরকার শুধু ফি নির্দিষ্ট করে দিলেই হবে না। একই সাথে মনিটরিংও করতে হবে। কারণ অভিভাবকরা অনেক সময় হয়রানিসহ নানা কারণে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন না।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্র এবং বোর্ড ফি মিলিয়ে এসএসসির ফরম পূরণে বিজ্ঞান বিভাগে বোর্ড ফি ১ হাজার ৫শ’ ৫ টাকা ও কেন্দ্র ফি ৪শ’ ৬৫ টাকাসহ মোট ১ হাজার ৯শ’ ৭০ টাকা, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে বোর্ড ফি ১হাজার ৪শ’ ১৫ টাকা, কেন্দ্র ফি ৪শ’ ৩৫ টাকাসহ মোট ১ হাজার ৮শ’ ৫০ টাকা এবং মানবিক বিভাগে বোর্ড ফি ১হাজার ৪শ’ ১৫ টাকা ও কেন্দ্র ফি ৪শ’ ৩৫ টাকাসহ মোট ১ হাজার ৮শ’ ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এবছর সিলেট শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ২০২০ সালে নবীগঞ্জ উপজেলায় মোট ৩৩ টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা অংশ গ্রহণ করবে। এর মধ্যে ১৮টি স্কুল ও মাদ্রাসা ১৫ টি রয়েছে। এ সব প্রায় প্রতিষ্ঠানে আগামী ২০২০ সালে অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পূরণের নামে কোচিংসহ নানা খাত দেখিয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে বলে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা গেছে, নবীগঞ্জ উপজেলার সৈয়দ আজিজ হাবীব উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী প্রতি জনের কাছ থেকে ৪ হাজার ১’শ টাকা, পানিউমদার রাগিব রাবেয়া স্কুল এন্ড কলেজে ৪ হাজার টাকা, ইনাতগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ৩ হাজার ৬’শ টাকা, আউশকান্দি র.প স্কুল এন্ড কলেজে ৩ হাজার ৫শ টাকা, হাজী আঞ্জব আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪ হাজার, বাগাউরা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩ হাজার ৬শ টাকা, নহরপুর শাহজালাল (রা.) দাখিল মাদ্রাসায় ৩ হাজার ৫শ টাকা ফি নেয়া হচ্ছে।
এদিকে নবীগঞ্জ শহরতলীর জে.কে মডেল সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে ও হীরা মিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ফরম পূরণের সময় ২ হাজার ১শত টাকা নেয়া হয়েছে এবং কোচিং এর জন্য পরবর্তীতে ১ হাজার ৫শ টাকা করে নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা। অতিরিক্ত ফি দিতে হিমশিম খাচ্ছেন অনেক অভিভাবকরা। আবার অনেকেই তাদের ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যৎ শিক্ষা জীবনের কথা চিন্তা করে দার-দেনা করে টাকা করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
পানিউমদার রাগিব রাবেয়া স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক এনামুল হকের সাথে ফি নিয়ে কথা বললে তিনি জানেন না জানিয়ে ফোন কেটে দেন।
আমাদের এ প্রতিবেদক অভিভাবক সেজে বিভিন্ন স্কুলে গেলে শিক্ষকরা জানান, ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তে তারা পরীক্ষার ফি বাবদ ২ হাজার ১ শত টাকা ও কোচিং ফি বাবদ ২ হাজার টাকা নিচ্ছেন। এসময় সৈয়দ আজিজ হাবীব উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সূকা বৈদ্ধ’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ফরম ফি বাবদ ২ হাজার ৩০ টাকা ও কোচিং বাবত ২ হাজার টাকা দিতে হবে।
নহরপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপার আব্দুস সালাম বলেন, ফরম পূরণের ফি ২ হাজার ৫শ টাকা। কোচিং এর টাকা আলাদা তা সরাসরি গিয়ে জানার জন্য বলেন।
ইনাতগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বদরুল আলম বলেন, ৩ হাজার ৬ শ টাকা নিয়ে আসেন। আর আউশকান্দি র.প স্কুলের প্রধান শিক্ষক লুৎফুর রহমান ফি কত জানেন না বলে ফোন রেখে দেন।
এদিকে হাজী আঞ্জব আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানু মিয়ার কাছে ফি’র কথা জানতে চাইলে রেগে উঠে বলেন, এসব তথ্য মোবাইলে বলা যাবে না, সরাসরি স্কুলে গিয়ে জানার জন্য। এ কথা বলে তিনি পাশে থাকা বিদ্যালয়ের এক ম্যানেজিং কমিটির এক সদস্যের কাছে ফোন ধরিয়ে দেন।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ছাদেক হোসেন বলেন, কেন্দ্র এবং বোর্ড ফি মিলিয়ে এসএসসির ফরম পূরণে বিজ্ঞান বিভাগে ২ হাজার টাকা, মানবিক ও অন্যান্য বিভাগে ১৯শত টাকা নির্ধারিত করা হয়েছে। অতিরিক্ত ফি নেয়ার কোন সুযোগ নেই। এ ধরনের কোন অভিযোগ তাদের কাছে নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।