আ.লীগের গলার কাঁটা এমপি-মন্ত্রীরা!
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:২৭:০৬,অপরাহ্ন ২৪ ডিসেম্বর ২০১৪
নিউজ ডেস্ক:: ৫ জানুয়ারির ‘বিতর্কিত’ নির্বাচনের পর ছাত্রলীগ, যুবলীগের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে ক্ষমতাসীনরা যতটা বেকায়দা পড়েছিল, তার চেয়ে বেশি বেয়কায় পড়েছে গুটিকয়েক এমপি, মন্ত্রী ও নেতার বেফাঁস মন্তব্যে। এরা বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের গলার কাঁটা হয়ে বিঁধেছেন।
গত এক বছরে আওয়ামী লীগের গলার বড় কাঁটা হলেন- লতিফ সিদ্দিকী, এইচটি ইমাম, একে খন্দকার, বদি ও মহসিন আলী।
একে খন্দকার:
আওয়ামী লীগ সরকারের ২০০৯-২০১৩ মেয়াদের পরিকল্পনামন্ত্রী ও মুক্তিবাহিনীর উপপ্রধান একে খন্দকারের লেখা ‘১৯৭১: ভেতরে বাইরে’ গত ৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে তা নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। বইয়ে তিনি লিখেছেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু তার ভাষণ শেষ করেছিলেন ‘জয় পাকিস্তান’ বলে। আর সশস্ত্র যুদ্ধের কোনো প্রস্তুতি ছিল না রাজনৈতিক নেতৃত্বের। এ বই নিয়ে সংসদ ও সংসদের বাইরে ব্যাপক সমালোচনা হয়। একে খন্দকারের বইয়ের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন বক্তব্যের অসারতা প্রমাণিত হয়েছে বলে অভিযোগ করে বিএনপি।
লতিফ সিদ্দিকী:
একে খন্দকারের বই বিতর্ক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই হজ ও তবলীগ জামাতের মতো অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে হঠাৎ সবকিছু এলোমেলো করে দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘আমি কিন্তু হজ আর তবলীগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী, আমি জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী। এই হজে যে কত ম্যানপাওয়ার নষ্ট হয়, হজের জন্য ২০ লাখ লোক আজ সৌদি আরবে গেছে, এদের কোনো কাম নেই, এদের কোনো প্রডাকশন নেই, শুধু রিডাকশন দিচ্ছে, শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা দিয়ে আসছে। গড়ে যদি বাংলাদেশ থেকে এক লাখ লোক হজে যায়, প্রত্যেকের পাঁচ লাখ টাকা করে পাঁচশ কোটি টাকা খরচ হয়।’
এছাড়া তিনি প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে কথা বলেন। তিনি বলেন, জয় আওয়ামী লীগের কে? তার মাসিক বেতন নিয়েও কথা বলেন। এর পরপরই সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানায়। পর তাকে দলের সভাপতিমণ্ডলীর পদ ও বস্ত্র ও পাট এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে অব্যহতি দেয়া হয়। জরুরি বৈঠক ডেকে দলের প্রাথমিক সদস্যপদও বহিষ্কার করা হয়। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার পর এভাবে দল থেকে বহিষ্কারের ঘটনা এটাই প্রথম।
এইচটি ইমাম:
লতিফ সিদ্দিকী রেশ কাটিয়ে উঠতে না উঠতে আবার আওয়ামী লীগকে বিতর্কিত করে তুলে দলের উপদেষ্টা পরিষেদের সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমামের বেফাঁস মন্তব্য। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের সময় (৫ জানুয়ারির নির্বাচন) আমি তো প্রত্যেকটি উপজেলায় কথা বলেছি, সব জায়গায় আমাদের যারা রিক্রুটেড, তাদের সঙ্গে কথা বলে, তাদেরকে দিয়ে মোবাইল কোর্ট করিয়ে আমরা নির্বাচন করেছি। তারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, বুক পেতে দিয়েছে।’ ওই সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমাদের লিখিত পরীক্ষায় ভালো করতে হবে। তার পরে ‘ভাইভাটা’ আমরা দেখবো।’
এইচটি ইমামের এমন বক্তব্যের পর দলের ভেতরে-বাইরে নানা গুঞ্জন শুরু হয়। ক্ষোভ প্রকাশ করেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘দায়িত্বশীল পদে থেকে সরকার ও দলের ক্ষতি হয় এমন বক্তব্য দেয়া ঠিক হয়নি।’
এদিকে এইচটি ইমামের বক্তব্য নিয়ে বিএনপির পক্ষে থেকে বলা হয়, ‘প্রশাসনে দলীয়করণ ও নির্বাচনে কারচুপির যে অভিযোগ বিএনপি করে এসেছে এতোদিন তার প্রমাণ এইচটি ইমামের বক্তব্য।’ এছাড়া বিএনপির পক্ষ থেকে ইমামকে তাদের দলীয় লোক বলেও দাবি করা হয়।
সৈয়দ মহসিন আলী:
আওয়ামী লীগের আরেক প্রবীণ নেতা সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে ধূমপান করে বেশ সমালোচিত হন। কিন্তু এরপর তিনি থেমে থাকেননি। আরেক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘এরা সবক’টা খবিশ, চরিত্রহীন! স্বাধীন কমিশন হলে পরে দেখে নেবো তোমরা (সাংবাদিকরা) কতটুকু যেতে পারো!’
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি পরিষ্কার করে বলেন, ‘আই এম ভেরি ক্লিয়ার, আপনারা রংবাজি করবেন, আর আমি মিষ্টি খাওয়াবো- তা হবে না। আমারও শক্তি আছে। কার কী চরিত্র আমার জানা আছে। ডিএসবি দিয়ে চারিত্রিক ডাটা বের করতে সময় লাগবে না। এরা কেউ জার্নালিজম (সাংবাদিকতা) পড়ে সাংবাদিক হয়নি। একমাত্র আমার মেয়ে জার্নালিজমে এমএ করেছে।’ তার এমন বেফাঁস কথাবার্তায় বিব্রত হয়েছে সরকার।
তার এমন মন্তব্যের কঠোর নিন্দা জানান সাংবাদিক নেতারা। একই সঙ্গে মন্ত্রীকে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ আখ্যায়িত তাকে অপসারণ ও গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়। পরে এক মন্ত্রিসভার বৈঠক মহসিন আলীকে সতর্ক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যাতে তিনি ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো মন্তব্য করে সরকারকে বিতর্কিত না করেন।
আবদুর রহমান বদি:
‘ইয়াবা সম্রাট’ হিসেবে খ্যাত আওয়ামী লীগের আরেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি। তিনি শুধু ইয়াবা ব্যবসায় সীমাবদ্ধ থাকেননি। কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে সার্বিক সহায়তা করা এবং বিভিন্ন সময়ে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে স্থায়ীভাবে বসবাস করার সুযোগ করে দেয়া জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা ও এনজিও কর্মকর্তাদের তালিকা প্রকাশ করেছে সরকার। কক্সবাজার জেলাতে এ তালিকায় সবার শীর্ষে রয়েছে সরকার দলীয় এ সংসদ সদস্য। বিভিন্ন সময় বদির উপস্থিতিতেই আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী তার গাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার করেছে।
আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অভিযোগও রয়েছে এ সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে দুদক অনুসন্ধান করে তার প্রমাণও পেয়েছে। এ জন্য তাকে কয়েকদিন জেলহাজতেও থাকতে হয়েছে। বর্তমানে তিনি জামিনে মুক্ত আছেন।
বর্তমানে এসব নেতাদেরকে দলের কার্যেক্রম থেকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হযেছে। তাছাড়া লতিফ সিদ্দিকী বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।