আবারো যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের বরর্বরতা,এক কৃষ্ণাঙ্গ তরুণকে হত্যা
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:১৮:০১,অপরাহ্ন ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: পুলিশের বর্বরতায় ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠছে যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের সেন্ট লুইস। পুলিশের দিকে অস্ত্র তাক করার অভিযোগে এক কৃষ্ণাঙ্গ তরুণকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে ফার্গুসনের শহরতলী সেন্ট লুইস থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে বারকেলি এলাকায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।
কৃষ্ণাঙ্গ ওই তরুণের নাম অ্যান্টোনিও মার্টিন (১৮)। ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার সকালে ৩০০ বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে এলে পুলিশের সঙ্গে তাদের হাতাহাতি হয়।
গত আগস্টে এই অঙ্গরাজ্যের ফার্গুসন এলাকায় কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ মাইকেল ব্রাউনকে হত্যার পর সেন্ট লুইসে আরেক কৃষ্ণাঙ্গ তরুণকে হত্যা করা হলো। ব্রাউন হত্যার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে মানুষ প্রতিবাদ জানায়। সেই ঘটনার রেশ শেষ হতে না হতেই আরেক কৃষাঙ্গ তরুণকে হত্যা করা হলো।
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘যে লোকটিকে হত্যা করা হয়েছে সেই অ্যান্টোনিও পুলিশের দিকে অস্ত্র তাক করেছিল।’
সেন্ট লুইসের কাউন্টি পুলিশ প্রধান জন বেলমার বলেন, ‘বারকেলির উত্তর হ্যানলি রোডের একটি পেট্রোল স্টেশন থেকে চুরির ঘটনার একটি কল আসে পুলিশের কাছে। ওই কল পেয়ে পুলিশ কমকর্তা ঘটনাস্থলে যান। পুলিশ ওই স্টেশনে পৌঁছলে অ্যান্টোনিও হাতে তৈরি একটি বন্দুক তাক করান পুলিশের দিকে। পুলিশ নিরুপায় হয়ে তিনটি গুলি ছোঁড়ে। তার একটি অ্যান্টোনিওকে বিদ্ধ করে।’
জন বেলমার বলেন, ‘ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা দেখে আমাদের বেশিরভাগ লোক অভিমত দিয়েছেন অ্যান্টোনিও পুলিশ কর্মকর্তার জীবন বিপন্ন করে তুলেছিলেন।’ তিনি এই ঘটনাকে ‘সবার জন্য একটি বিয়োগান্তুক ঘটনা’ বলে উল্লেখ করেন।
বেলমার বলেন, ‘আমরা নিশ্চিতভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতি সহানভূতিশীল। কিন্তু নিহতদের ‘পছন্দ’ সঠিক ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘পুলিশের প্রতি বন্দুক তাক না করে অ্যান্টোনিওর সামনে আরো বিকল্প ছিল। তিনি পালিয়ে যেতে পারতেন অথবা তিনি বন্দুকটি ফেলে দিতেও পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। এই অবস্থায় নাইনএমএম পিস্তলধারী পুলিশ কর্মকর্তার সামনে গুলি না করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কোনো পথ ছিল না।’
কর্নেল বেলমার বলেন, ‘ঘটনা তদন্তে একজন প্রসিকিউশন নিয়োগ করা হয়েছে।’
বারকেলির মেয়র থিওডোর হসকিনস বলেন, ‘মৃত ব্যক্তি (অ্যান্টোনিও) পুলিশের দিকে অস্ত্র তুলেছিল। সিটি এবং সেন্ট লুইস কর্তৃপক্ষ ঘটনা তদন্তে নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করবে।’
সংবাদদাতারা বলছেন, ঘটনাটি মাইকেল ব্রাউনের মতো দেশজুড়ে প্রতিবাদের জন্ম দিতে পারে।
বেলমার বলেন, ‘বুধবার সেন্ট লুইসে ২০০ থেকে ৩০০ মানুষ সমবেত হয়ে ঘটনার প্রতিবাদ জানায়। তারা পুলিশের প্রতি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তিনটি বিস্ফোরণও ঘটে। এ ঘটনায় ৪ জনকে আটক করে পুলিশ।’
পুলিশ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে। ওই ঘটনায় দ্বিতীয় এক ব্যক্তিকেও দেখা গেছে। তবে সে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
পুলিশের এই বর্বরতায় কৃষ্ণাঙ্গরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অরল্যান্ডো ব্রাউন নামে এক কৃষ্ণাঙ্গ বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, ‘আমি জানি, পুলিশ কর্মকর্তাদের কিছু দায়িত্ব আছে। কিন্তু প্রতিটি ঘটনার জবাব কী তাদের অস্ত্রের মাধ্যেমেই দিতে হবে?’
তিনি বলেন, ‘এটা সাদা-কালোর (বর্ণবাদী) কোনো ইস্যু নয়, এটা ভুল-সঠিকের বিষয়।’
সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ বেশ অহিষ্ণু হয়ে ওঠেছে। নাগরিকদের সঙ্গে তাদের সম্পর্কও যেন আগের মতো নেই।
গত ডিসেম্বরে নিউইয়র্কে আকাই গুলেরি নামে ২৮ বছরের এক যুবককে গুলি করে পুলিশ। তবে তিনি সশস্ত্র ছিলেন না।
নভেম্বরে ওহিও অঙ্গরাজ্যে তামির রাইস নামে ১২ বছরের এক শিশুকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। সে একটি পার্কে কয়েকজনের প্রতি বন্দুক তাক করেছিল। আসলে সেটি ছিল খেলনা পিস্তল।
গত জুলাইয়ে নিউইয়র্ক পুলিশের হাতে ধরাপড়ার পর মারা যান এরিক গার্নার (৪৩)। ট্যাক্সবিহীন সিগারেট বিক্রি করছিলেন তিনি।
এর আগে এপ্রিলে উইসকনসিনে ডোন্ট্রে হ্যামিলটন (৩১) নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ।