অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিতে যাচ্ছে ২০ দল
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:৩৭:৩৫,অপরাহ্ন ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
নিউজ ডেস্ক ::সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ের আন্দোলনে এবার আরও কঠোর অবস্থানের দিকে যাচ্ছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। দলটির চলমান কর্মসূচি সামনের দিকে যতই এগুচ্ছে, ততই যেন মনোভাবে কঠোর থেকে কঠোরতর হচ্ছে। সরকারকে হটিয়ে নিদলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহনে নতুন নির্বাচনের দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিতে যাচ্ছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট।
এ লক্ষে লাগাতার অবরোধের পাশাপাশি কয়েক দফা ৩৬, ৭২ ঘন্টার হরতাল পালন করলেও সরকার দাবির প্রতি কর্নপাত না করায় অসহযোগ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন সংলাপের কথা বলা হলেও এবার সে পথ থেকে সরে এসেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। দলটির পক্ষ থেকে তাই বলা হচ্ছে- সরকার যতদিন না পর্যন্ত পদত্যাগ করছে, ততদিন আন্দোলন চালিয়ে যাবে বিএনপি জোট।
বিএনপি সূত্র জানায়, চলমান আন্দোলন চূড়ান্তভাবে সফল করতে বিএনপি ও জোটের কেন্দ্রীয় নেতাদের রাজপথে অবস্থান নেয়া, ঢাকা থেকে দেশকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করতে কঠোর বার্তা দেবে জোটের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। এ লক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনকে ২০ দলের সঙ্গে রাখার জোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে বলেও জানা গেছে।
একই সঙ্গে বিরোধী জোটের আন্দোলনের সমর্থন আদায়ে দেশি-বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গেও নানাভাবে যোগাযোগ চালানো হচ্ছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি সপ্তাহেই আন্দোলনের কঠোরতা বাড়াতে নতুন কৌশল নির্ধারণ করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। রাজধানীর নির্ধারিত কিছু স্পটে সিনিয়র নেতাদের নেতৃত্বে অবরোধ-হরতালের সমর্থনে মিছিল করবে ২০দলীয় জোট ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো। বিএনপি চেয়ারপারসন ঢাকা মহানগর বিএনপির ৫৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ থানা-ওয়ার্ডের নেতাদের মাঠে থাকার জন্য কঠোর নির্দেশ দেবেন।
দলীয় সূত্রমতে, গত ৬ জানুয়ারি থেকে বিএনপি জোটের প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার ডাকে অবরোধ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকা দলটি এখন আরও সক্রিয় ভূমিকায় রয়েছে। অবরোধের পাশাপাশি খানিকটা থেমে থেমে হরতালও দিয়ে আসছে দলটি। ফলে বিএনপির আন্দোলন প্রতিনিয়ত আরও শক্ত অবস্থানের দিকে যাচ্ছে। এমনটাই মত একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লষকের।
দলটির নীতিনির্ধারকদের দাবি, টানা প্রায় দেড় মাস ধরে আন্দোলনকে টেনে নিয়ে আসা বিএনপির বড় ধরনের সফলতা। এছাড়া ১৮ ঘণ্টা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে বিদ্যুৎ পুনঃসংযোগ দেওয়ায় আন্দোলনে চূড়ান্ত সফলতা আসবে বলে অনেকটা নিশ্চিত ২০ দলের হেভিওয়েট নেতারা।
২০ দলীয় জোটচলমান আন্দোলনে পেট্রলবোমার নৃশংসতাসহ বিভিন্ন সহিংসতা ও নাশকতায় কিছুটা হলেও উদ্বিগ্ন । ২০ দলীয় জোট ‘পেট্রলবোমা হামলা সহিংসতার সঙ্গে তারা জড়িত নন বলে দাবি করে জানিয়েছে এসব সহিংসতার দায় নেবে না ২০ দলীয় জোট।তাদের দাবি সরকারি এজেন্টরা এসব করছে। এসব হামলা করে বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে চাপে ফেলার চেষ্টা করছে সরকার।’
এদিকে সরকার রাজনৈতিকভাবে বিএনপিকে দেউলিয়া করা এবং বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে এবং অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে আন্দোলন থেকে বিমুখ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে অভিযোগ করেছেন বিএনপির দায়িত্বশীল বেশ ক’জন নেতা।
বিএনপি মনে করে ‘সরকার যতই ষড়যন্ত্র করুক, তা কোনো কাজে আসবে না। বিএনপিকে ভাঙা কখনই সম্ভব হবে না। দলের নেতাকর্মীরা অতীতের সব মান-অভিমান ভুলে গিয়ে এখন আন্দোলনের মঞ্চে আছে। সরকার দলের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার ও হয়রানি করলেও নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা আছে। আর তাই আন্দোলনে সফলতা আনার জন্য দলের প্রতিটি নেতাকর্মী বদ্ধপরিকর।’
চলমান আন্দোলনে দলীয় নেতাকর্মীরা সুদৃঢ় ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি বিএনপির দাবি আন্দোলনের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন ও সুশীল সমাজ একাত্মতা প্রকাশ করে সরকারের প্রতি চাপ বাড়াচ্ছে।
সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ‘অসহযোগ’ কর্মসূচি ঘোষণা করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে ২০ দলে। সে কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে জোটের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা যার যার অবস্থান থেকে রাজপথে নেমে আসার নির্দেশনা রয়েছে।
পাশাপাশি সাধারণ জনগণকেও সব ধরনের সরকারি ট্যাঙ্ বন্ধ করে দেওয়াসহ সব ধরনের সরকারি নির্দেশ অমান্যের কঠোর বার্তাও জানানো হবে। এ লক্ষে সারা দেশে স্থানীয়ভাবে জেলা ও মহানগর পর্যায়ে কঠোরভাবে কর্মসূচি পালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেন, ‘মধ্যবর্তী নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না করা পর্যন্ত ২০ দলের ডাকা অবরোধ চলবে।‘সরকার পদত্যাগ করলে নির্বাচনসহ সব বিষয়েই আলোচনা হতে পারে।
ক্ষমতাসীনরা পদত্যাগ করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের ঘোষণা দিলে অবরোধ প্রত্যাহারের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে ২০ দলীয় জোট।’
‘অসহযোগ’ আন্দোলনের ইঙ্গিত দিয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সরকার ইতিমধ্যেই রাত ৯টার পর দেশব্যাপী মহাসড়কে বাস চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।
অচিরেই সব সরকারি অফিস বন্ধের ঘোষণা দিতেও বাধ্য হবে। গণদাবির বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলন থেকে পিছ-পা হবে না ২০-দলীয় জোট। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন চালিয়ে যেতে আমরা প্রস্তুত।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াঢাকা প্রতিদিন ডটকমকে বলেন, সরকার যত হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি আরো সতর্কতার সঙ্গে আন্দোলন বেগবান করবে। কোনো অবস্থাতে এখন আর পিছপা হবে না।
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শত বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নির্দেশে দেশব্যাপী সর্বাত্মক আন্দোালন চালিয়ে যাবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দল।