অবশেষে মুখ খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্রিগেডিয়ার বারী
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:২১:৪৭,অপরাহ্ন ০১ নভেম্বর ২০১৪
অনলাইন ডেস্ক: অবশেষে মুখ খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ওয়ান-ইলেভেনের সময় আলোচিত সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) চৌধুরী ফজলুল বারী। তিনি পরিষ্কার করবেন ওয়ান ইলেভেনে নিজের অবস্থান। দুই নেত্রীর আটক, মুক্তি, নির্বাচন, জেনারেল মইন ও অন্য সবার ভূমিকা নিয়েও লিখবেন। সম্প্রতি টেলিফোনে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘ওয়ান-ইলেভেন নিয়ে সঠিক ইতিহাস কেউই তুলে ধরেননি। আমাকে ঘিরে যত অপপ্রচার, বাস্তবতা তা ছিল না। এখনো সংশ্লিষ্ট সবাই জীবিত রয়েছেন। তাই চিন্তা করছি, ওয়ান-ইলেভেন নিয়ে সত্যটাই তুলে ধরব। সেদিন পেশাদার কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব ও নির্দেশ পালন করেছি। আমাকে সরিয়ে দেওয়ার পরও প্রতিবাদ জানাইনি। সেদিন যদি আমি ঘুরে দাঁড়াতাম তাহলে হয়তো আজকের ইতিহাস অন্যরকম হতো।’ চৌধুরী ফজলুল বারী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসের একটি শহরে বাস করছেন। ওয়ান-ইলেভেন শেষে চাকরি হারানোর পর যুক্তরাষ্ট্রে কঠিনভাবে জীবন শুরু করেছিলেন তিনি। সেখানে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকটা বিপাকে পড়েন। শুরুতে নিউইয়র্কে পিজা দোকানে কাজ করতেন। বাড়ি বাড়ি পিজা পৌঁছে দেওয়ার তার ছবিও পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এখন কী করছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিদিন ৩০০ কিলোমিটার গাড়ি ড্রাইভ করে ওষুধ পৌঁছে দেন নির্ধারিত ঠিকানায়। একটি ওষুধ কোম্পানিতে কাজ করেন। বললেন, ‘অনেক অপপ্রচারের শিকার হয়েছিলাম। কিন্তু কঠিন বাস্তবতার মধ্যে এ দেশে বাস করছি। বলতে পারেন, অনেক কষ্টে আছি। তবে প্রথম কয়েক বছরের তুলনায় এখন কিছুটা ভালো।’
আলাপচারিতায় তিনি আরও বলেন, ‘বিডিআরে (এখন বিজিবি) চাকরি করতাম। রাজশাহীর মানুষ এখনো স্মরণ করে। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। চোরাচালানের বিরুদ্ধে নিয়েছিলাম কঠোর ব্যবস্থা। র্যাব প্রতিষ্ঠায় পালন করেছি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ছিলাম।’ ওয়ান-ইলেভেনের সময় বঙ্গভবনে যাওয়া নিয়ে বলেন, ‘আমি যে দায়িত্বে ছিলাম, তার ডিজি দেশের বাইরে ছিলেন। আমি ছিলাম ভারপ্রাপ্ত। তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বঙ্গভবনে গিয়েছিলাম। ওয়ান-ইলেভেনের পর চেষ্টা করেছি সততা-নিষ্ঠা নিয়ে কাজ করতে। সেদিন যারা অসততার সঙ্গে ছিলেন, আজ তারাই ভালো আছেন। আমার জন্য আমার পুরো টিম সততা নিয়েই কাজ করেছিল। পরে তারাও ভিকটিমাইজ (ক্ষতিগ্রস্ত) হয়েছিল। আমাদের সামনে ছিল দেশ।’ দুই নেত্রীকে গ্রেফতার প্রসঙ্গে ব্রিগেডিয়ার বারী বলেন, ‘তৎকালীন আইজিপি নূর মোহাম্মদ এখনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। তাকে কে নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রশ্ন করলে জানতে পারবেন। এখনো সময় আসেনি সব কথা বলার। তবে সময় হলে বলব। অনেকে আমার ওপর দোষারোপ করেন, নিজেরা অনেক কিছু করেছেন। দুই নেত্রীর প্রতি আমার সম্মান সবসময় ছিল। তাদের বিরুদ্ধে কোনো অপপ্রচারকে আমি প্রশ্রয় দিইনি। এমনকি একজন নেত্রীর বিপক্ষে একটি পত্রিকা ব্যক্তিগত বাজে সংবাদ পরিবেশন করায় সেই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিয়েছিলাম। এ নিয়েও অনেক মিথ্যাচারের শিকার হয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘অনেক অপপ্রচার হয়েছে আমার বিরুদ্ধে। ইতিহাসে সত্য একদিন উদঘাটন হবেই। আপাতত কিছু বলতে চাই না। আমি একজন মুসলমান। আল্লাহর প্রতি পূর্ণাঙ্গ আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। আমি মনে করি, সেদিন যে যা করেছিলেন, সবকিছুর সঠিক ইতিহাস বেরিয়ে আসবেই।’ কথায় কথায় আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। বললেন, ‘একজন নিষ্ঠাবান কর্তব্যপরায়ণ সৈনিক হিসেবে কাজ করেছি। বাংলাদেশ আমার ভালোবাসা। আজ দেশ থেকে দূরে থেকে ভালো লাগে না। আমার সম্পর্কে অনেক সিনিয়রকেও বলা হয়েছিল, আমি তাদের বিপক্ষে ছিলাম। আমি যদি এত ক্ষমতাশালী হয়ে থাকি, তাহলে আমাকে ওয়ান-ইলেভেনের সময়ই সরিয়ে দেওয়া হলো কেন? এ নিয়ে কথা বললে এখন তিক্ততা বাড়বে। তাই কথা বলতে চাই না। তবে সময় হলে সবকিছু লিখব। নতুন প্রজন্মকে জানাব সেদিনের ঘটনাবলি।’ সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি স্পষ্টবাদী মানুষ, হিপোক্রেসিতে বিশ্বাস করি না। সামনে এক পেছনে আরেক- এরকম ভাব আমার কখনই ছিল না। এখনো নেই। এখনো বাংলাদেশের জন্য প্রার্থনা করি। মনেপ্রাণে চাই, বাংলাদেশের সব মানুষ ভালো থাকুক।’