সৌদি আরব যেতে সাড়া মিলছে না নারীদের
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:৩৮:৫৯,অপরাহ্ন ১৭ এপ্রিল ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
বাংলাদেশ থেকে মাসে ১০ হাজার গৃহকর্মী নিতে সৌদি আরবের ঘোষণায় নারীদের সাড়া মিলছে না। সে দেশে যেতে আগ্রহী নারীদের নাম নিবন্ধনের নির্ধারিত এক মাসে (মার্চ) সারা দেশে নিবন্ধন করেছেন তিন হাজারেরও কম। এ অবস্থায় সৌদি আরবে গৃহকর্মী পাঠানো যাবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
বৈদেশিক কর্মসংস্থান আইন অনুযায়ী, এখন সরকারিভাবে নাম নিবন্ধন ছাড়া কোনো কর্মী বিদেশ যেতে পারেন না।
অভিবাসনবিষয়ক বেসরকারি সংস্থাগুলো বলছে, গৃহকর্মী হিসেবে যাওয়া মেয়েরা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হওয়ায় ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশ এখন নারী কর্মী পাঠানো প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। এমন তথ্যেই হয়তো বাংলাদেশি নারীরাও আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এ ছাড়া আরেকটি কারণ মাত্র ৮০০ রিয়াল (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৭ হাজার টাকা) বেতন। অবশ্য সরকার বলছে, এবার নারী গৃহকর্মীদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করার সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ অভিবাসী মহিলা শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেতন কম, নেতিবাচক প্রচারণা এগুলো নিবন্ধন না করার কারণ হতে পারে। তবে মাঠপর্যায়ে মেয়েদের যাওয়ার আগ্রহ আছে। একবার যদি মেয়েরা যাওয়া শুরু করেন এবং তাঁরা সেখানে ভালো থাকেন, তবে হয়তো আরও অনেকেই আগ্রহী হবেন। সরকারকেই এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে।’
সাত বছরের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে আবারও কর্মী নেওয়ার ঘোষণা দেয় সৌদি আরব। দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আহমেদ আল ফাহাইদের নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় আসে। ওই দলের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে নারী গৃহকর্মী নিতে চায় সৌদি আরব। তারা মাসে ১০ হাজার কর্মী নেবে। সে হিসাবে বছরে ১ লাখ ২০ হাজার গৃহকর্মী সৌদি আরবে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশের সঙ্গে সৌদি আরবের ‘এগ্রিমেন্ট অন ডোমিস্টিক সার্ভিস ওয়ার্কার্স’ শীর্ষক একটি চুক্তিও হয়। চুক্তি অনুযায়ী, একেকজন গৃহকর্মী মাসে ৮০০ রিয়াল বেতন পাবেন। সৌদি আরব যেতে কোনো খরচ হবে না বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়। এমন ঘোষণার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে নাম নিবন্ধনের জন্য পুরুষদের উপচে পড়া ভিড় শুরু হয়।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রাথমিকভাবে নারী গৃহকর্মী নেবে সৌদি আরব। এরপর মার্চ মাসজুড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে আগ্রহী নারীদের নিবন্ধন শুরু হয়। গত ২৮ মার্চ পর্যন্ত নিবন্ধনের সময় থাকলেও পরে আরও তিন দিন বাড়ানো হয়। সারা দেশের ইউনিয়ন ও নগর তথ্যসেবাকেন্দ্রগুলোর পাশাপাশি বিএমইটির অধীন ৪২টি জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ে নিবন্ধনের সুযোগ ছিল। নিবন্ধনের খরচ ছিল ২০০ টাকা।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) সূত্রে জানা গেছে, নির্ধারিত সময়ে সারা দেশে মাত্র ২ হাজার ৯৭৬ জন নারী নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১ হাজার ১৩০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ২৪৬ জন, রাজশাহী বিভাগে ৪৬২ জন, খুলনা বিভাগে ৪৩৫ জন, রংপুর বিভাগে ৪১৩ জন, বরিশাল বিভাগে ১৬১ জন ও সিলেটে ১২৯ জন নিবন্ধন করেন।
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, অতীতে কখনোই কোনো নিবন্ধনে এত কম সাড়া মেলেনি। এর আগে সরকারিভাবে মালয়েশিয়ায় যেতে ১৪ লাখ লোক নিবন্ধন করেছিলেন। ২০১৩ সালে হংকং, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে যখন নারী কর্মী পাঠানোর বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়, তখনো ৪০ হাজারের বেশি নারী নিবন্ধন করেছিলেন। কিন্তু এবার সৌদি আরব বিপুলসংখ্যক নারী কর্মী নেওয়ার ঘোষণা দিলেও নারীদের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।
জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) সভাপতি আবুল বাসার বলেন, ‘এত কম নিবন্ধন করার বিষয়টি নিয়ে আমরাও ভাবছি। যাঁরা বিদেশে নারী গৃহকর্মী পাঠান, তাঁদের সঙ্গে আমরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলব। এরপর আমরা এই খাতের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব খন্দকার ইফতেখার হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, বেতনের বিষয়ে বাংলাদেশের কিছুই করার ছিল না। সৌদি আরবই এটি চূড়ান্ত করেছে। আর নিবন্ধন একটি চলমান প্রক্রিয়া। যে কেউ যেকোনো সময় নিবন্ধন করতে পারবেন। এ ছাড়া কয়েক লাখ নারী কর্মীর আগেই নিবন্ধন করা আছে। একবার কর্মী যাওয়া শুরু করলে আর সমস্যা হবে না।
সূত্র : প্রথম আলো