বিশ্বনাথে নিহত বৃদ্ধ মনাফের লাশ পুনরায় ময়না তদন্তের নির্দেশ দিলেন আদালত
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:৪৯:১০,অপরাহ্ন ২১ জুন ২০১৫
নিউজ ডেস্ক :: বিশ্বনাথে নিহত দিনমজুর বৃদ্ধ আব্দুল মনাফের লাশের পুনরায় ময়না তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। নিহতের ভাই আব্দুল হাশিমের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার সিলেটের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-২ এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম এই আদেশ প্রদান করেন। একই সাথে জেলহাজতে আটক অভিযুক্ত পিতা ও পুত্রকে পুনরায় ময়না তদন্ত রিপোর্ট আদালতে দাখিল না হওয়া পর্যন্ত শর্ত সাপেক্ষে জামিন প্রদান করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাদি পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট মো. আতিকুর রহমান।
জানা গেছে, উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের মৃত জবান আলীর পুত্র আব্দুল মনাফ (৫৫) গত ১৬ মে বিকেল থেকে নিখোঁজ হন। এরপর ১৮ মে সন্ধ্যায় বাদীর বসত ঘরের সম্মুখের গোয়াল ঘরে র্দুগন্ধ পেয়ে নিখোঁজ আব্দুল মনাফের স্ত্রী সেখানে গিয়ে দেখতে পান একটি কাঠের তক্তা দিয়ে আড়াল করে গলায় দঁড়ি লাগানো হাটু ভাঁজ করা অবস্থায় তার স্বামীর লাশ বেড়ার সাথে টেস দিয়ে রাখা। তখন তার চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন এবং খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে এসে লাশ উদ্ধার করে। পরদিন আব্দুল মনাফকে হত্যার অভিযোগে গ্রামবাসী হরিপুর গ্রামের অভিযুক্ত উস্তার আলী ও তার ছেলে মিন্টু মিয়াকে আটক করে থানা পুলিশে সোপর্দ করেন। এঘটনায় নিহতের ভাই থানায় তাৎক্ষণিকভাবে একটি দরখাস্ত করেন। যা বিশ্বনাথ থানায় অপমৃত্যু জিডি (জিডি নং-০৭) হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়। এরপর নিহতের সুরতহাল রিপোট ও ময়না তদন্তের রিপোর্ট এর ভিত্তিতে আব্দুল মনাফ আত্মহত্যা করেছেন মর্মে থানা পুলিশ আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন। এরপর আব্দুল মনাফকে হত্যার অভিযোগে তার ভাই আব্দুল হাশিম বাদি হয়ে ৫জনের নাম উল্লেখ ও আরো ৪/৫জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে গত ২৫ মে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-৩ এ একটি দরখাস্ত মামলা দায়ের করেন (বিশ্বনাথ সি.আর মামলা নং- ১৪১/২০১৫)। ওই মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- হরিপুর গ্রামের উস্তার আলীর পুত্র টিটু মিয়া (২৫), তার পিতা উস্তার আলী (৫৫), ভাই মিন্টু মিয়া (২২), লুৎফুর (৩২) ও একই গ্রামের মৃত মজর আলীর পুত্র কবিরুল (৩৫)।
মামলার এজাহারে বাদি উল্লেখ করেন, তার ভাই আব্দুল মনাফ (৫৫) কে প্রবাসে (ওমান) পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার (মনাফ) কাছ থেকে দেড় লক্ষ টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করে আসামী টিটু মিয়া। ফলে আত্মীয় স্বজনদের কাছে আব্দুল মনাফ বিচার প্রার্থী হলে অভিযুক্ত টিটু ও তার পিতা উস্তার আলী তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। অভিযোগ করা হয় টিটু মিয়ার সাথে পাওনা টাকা আদায় নিয়ে বিরোধের জের ধরেই আব্দুল মনাফকে পরিকল্পিতভাবে অভিযুক্তরা হত্যা করেছে এবং ইতিপূর্বে মনাফকে হত্যার হুমকিও প্রদান করেছিলো টিটু।
এদিকে, বাদি হলফনামা সহকারে আদালতে অভিযোগ করেন, ভিকটিমের ময়না তদন্ত করার প্রমাণ (লাশ কাটার কোন চিহৃ) ভিকটিমের শরীরে পরিলক্ষিত হয় নি। তাই পুরনায় ভিকটিমের ময়না তদন্তের প্রার্থনা করে অভিযোগ করেন, আব্দুল মনাফের লাশ ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্তের জন্য ফরেনসিক বিভাগে প্রেরণ করা হলে ময়না তদন্তকারী ডাক্তার ইফফাত ফারুকী আসামীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কোন ধরনের ময়না তদন্ত না করেই লাশ পরিবারের কাছে সমজিয়ে দেন। দাফনের সময় নিহতের শরীরে কোন ধরনের ময়না তদন্তের প্রমাণ পরিলক্ষিত হয়নি। পরবর্তীতে তিনি (বাদি) সহ এলাকাবাসী এ ব্যাপারে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ প্রদান করেন। গত বৃহস্পতিবার সিলেটের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-২ এ বাদির পুনরায় ময়না তদন্তের আবেদন ও আটককৃত দুই আসামীদের পক্ষে জামিন আবেদন করা হলে আদালত বিষয়টি পর্যালোচনা করে ময়না তদন্তকারী পূর্বের ডাক্তার ইফফাত ফারুকীর উপর বাদি পক্ষের অনাস্থা থাকায় তাকে ব্যতিত অন্য যেকোন ডাক্তার দিয়ে সিভিল সার্জনের সরাসরি তত্ত্বাবধানে পুরনায় ময়না তদন্তের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। একই সাথে পুনরায় ময়না তদন্ত রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত জেলহাজতে আটক দুই আসামীর জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।