নৌডুবির বর্ণনা দিলেন উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশি
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:২৬:০৮,অপরাহ্ন ২১ এপ্রিল ২০১৫
প্রবাস ডেস্ক :: ভূমধ্যসাগরে কয়েক শ অভিবাসী নিয়ে ডুবে যাওয়া নৌযান থেকে জীবিত উদ্ধার হওয়া যাত্রীদের মধ্যে একজন বাংলাদেশিও রয়েছেন। তার বর্ণনায় উঠে এসেছে গত শনিবার স্থানীয় সময় মধ্যরাতে নৌযানটির ডুবে যাওয়ার সময়কার বিবরণ। খবর রয়টার্স, সিএনএন ও এপির।
ইতালির গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে রয়টার্সের খবরে বলা হয়, জীবিত উদ্ধার হওয়া ওই বাংলাদেশিকে হেলিকপ্টারে করে উদ্ধার করে এনে সিসিলি দ্বীপের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, নৌযানটিতে সাড়ে নয় শ আরোহী ছিল। ঘটনার সময় তাদের অনেকেই নৌযানটির মালামাল রাখার জায়গায় তালাবদ্ধ অবস্থায় ছিল।
সিসিলি দ্বীপের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত শহর কাতানিয়ার রাষ্ট্রীয় কৌঁসুলিদের বরাত দিয়ে সিএনএন এবং বার্তা সংস্থা এপিও প্রায় একই কথা জানিয়েছে।
এপির খবরে বলা হয়, তারা জিওভানি সালভি নামের কাতানিয়ার একজন রাষ্ট্রীয় কৌঁসুলির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছে। তিনি জানিয়েছেন, জীবিত উদ্ধার হওয়া ওই বাংলাদেশি নৌযানটির অবস্থা তাদের কাছে বর্ণনা করেছেন। ওই বাংলাদেশি জানিয়েছেন, নৌযানটি লিবিয়া থেকে যাত্রা শুরুর সময় এর মালামাল রাখার জায়গাতেই প্রায় ৩০০ অভিবাসী ছিল। সেখানে তাদের তালাবদ্ধ করে রাখে পাচারকারীরা। আর সব মিলিয়ে নৌযানটির সাড়ে নয় শ আরোহীর মধ্যে ২০০ জন নারীর পাশাপাশি বেশ কয়েকটি শিশুও ছিল।
সিএনএনের খবরে বলা হয়, বাংলাদেশি ওই অভিবাসীর কাছ থেকে রাষ্ট্রীয় কৌঁসুলিরা জানতে পেরেছেন, লোকে ঠাসা নৌযানটি দুদিন ধরে সাগরে মোটামুটি ঠিকঠাক ভাসলেও শনিবার মধ্যরাতে পাশ দিয়ে একটি বাণিজ্যিক জাহাজ যাওয়ার সময় বিপত্তি ঘটে। কারণ, জাহাজটিকে দেখামাত্রই লোকজন নৌযানটির সেদিকে ভিড় করে। এতে করে কাত হয়ে গিয়ে ডুবতে শুরু করে সেটি। এ সময় অনেকে বাঁচার আশায় সাগরে ঝাঁপ দেয়। এতে তাদের বাঁচার আশা আরও ক্ষীণ হয়ে পড়ে।
নৌযানটিতে বাংলাদেশি ছাড়াও আলজেরিয়া, মিসর, সোমালিয়া, নাইজার, সেনেগাল, মালি, জাম্বিয়া ও ঘানার নাগরিক ছিল। ওই বাংলাদেশি বা অন্য কারও নাম-পরিচয়ের ব্যাপারে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি গণমাধ্যমে।
ভূমধ্যসাগর দিয়ে কয়েক দশক ধরেই এভাবে অভিবাসীরা বিপজ্জনকভাবে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টা করছে। ইরাক, সিরিয়া ও লিবিয়া সংকটের জের ধরে সাম্প্রতিক সময়ে এভাবে সাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের দেশগুলোতে যাওয়ার ঘটনা বেড়েছে। বিশেষ করে বছরের এই সময়ে সাগর কিছুটা শান্ত থাকায় বিভিন্ন আকারের ঝুঁকিপূর্ণ নৌযানে করে শত শত মাইল দূরের ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে অভিবাসীরা।
এদিকে ডুবে যাওয়া নৌযানটিতে আরও বাংলাদেশি ছিলেন কি না, সে বিষয়ে খোঁজখবর নিতে ইতালিতে বাংলাদেশি দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জন্য যোগাযোগ রাখছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলমের উদ্ধৃতি দিয়ে এ খবর দিয়েছে ইউএনবি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত যতটুকু জানতে পেরেছি, তা হলো একজন বাংলাদেশি উদ্ধার হয়েছেন। তিনি ইতালিয়ার কাতানিয়া শহরে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।’ শাহরিয়ার আলম জানান, ওই অঞ্চলে বাংলাদেশের দুজন অনারারি কনসাল রয়েছেন। তাঁদের উদ্ধার হওয়া ওই বাংলাদেশি অভিবাসীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।