নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘শহীদ হামজা ব্রিগেড’
প্রকাশিত হয়েছে : ১:১৪:৫৮,অপরাহ্ন ১৩ এপ্রিল ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
‘শহীদ হামজা ব্রিগেড’ সংক্ষেপে এসএইচবি নামে নতুন একটি জঙ্গি সংগঠনের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে র্যাব। সংগঠনটির প্রত্যেক সদস্য ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ হিসেবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বলেও দাবি করেছে এই এলিট ফোর্স। তিন জঙ্গি ও তাদের অস্ত্র সরবরাহকারীকে গ্রেপ্তারের পর সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে নতুন এই সংগঠনের সন্ধান পাবার কথা জানিয়েছেন র্যাবের চট্টগ্রাম জোনের অধিনায়ক লে.কর্ণেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ।
তার দাবি, শহীদ হামজা ব্রিগেডের তিনটি সামরিক উইং আছে। এগুলো হচ্ছে, গ্রিণ, ব্লু এবং হোয়াইট। প্রত্যেক উইংয়ে সাতজন করে সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্য আছেন। ২০১৩ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রাম নগরীর ফয়’সলেকে একটি রেস্টুরেন্টে সভা করে এই জঙ্গি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটান সংগঠকরা।
সংবাদ সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যে মিফতা’র দাবি, শহীদ হামজা ব্রিগেডে কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থী যারা শান্তি চায় না, উচ্ছৃঙ্খল কর্মকান্ডে যুক্ত তারা আছেন। এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, আর্ন্তজাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও এর সঙ্গে যুক্ত আছেন। শিবিরের উচ্চাভিলাসী সদস্যরাও এর সঙ্গে যুক্ত বলে তিনি দাবি করেন।
শিবিরের সদস্যদের জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত হওয়া প্রসঙ্গে পরে আবারও প্রশ্ন করা হলে মিফতাহ বলেন, ‘যারা একসময় শিবির করত, নানা কারণে এখন শিবিরে নেই, তারাই মূলত এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।’ তবে সংগঠনের উদ্দেশ্যে কী, এর মূল নেতৃত্ব কার হাতে এসব বিষয়ে সুষ্পষ্ট কোন ধারণা র্যাব দিতে পারেনি।
মিফতাহ বলেন, ‘বিশ্বের যেখানে যেখানে মুসলমানদের উপর অত্যাচার-নির্যাতন চলছে, সেখানে কাজ করাই ছিল তাদের একটা উদ্দেশ্য। মিয়ানমারে নির্যাতিত মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানোর একটা টার্গেটও তাদের ছিল। তবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এসব বিষয়ের সত্যতা পাওয়া যাবে।’ ১২ এপ্রিল (রোববার) রাতে নগরীর কোতয়ালি থানার মিডটাউন আবাসিক হোটেলে অস্ত্র কেনাবেচার সময় বিক্রেতা মোজাহের হোসেন মিঞা (৩৫) এবং বাঁশখালীতে জঙ্গি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সাব্বির আহমেদ ওরফে মুহিবকে (২৩) গ্রেপ্তার করে র্যাব। এদের মধ্যে মোজাহেরের বাড়ি সাতকানিয়া উপজেলার উত্তর কাঞ্চনা এলাকায়। সাব্বির হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার গুলগাঁও গ্রামের আবুল কালাম ফটিকের ছেলে।
তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওইদিন রাতে আকবর শাহ থানার একে খান মোড়ে শ্যামলী বাস কাউন্টার থেকে মো.কামাল উদ্দিন ওরফে মোস্তফা (২৪) এবং আশরাফ আলীম ওরফে আদনানকে (২৫) আটক করা হয়। তারা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পালিয়ে যাচ্ছিল। পরে আরও তথ্যের ভিত্তিতে পাঁচলাইশ থানার কসমোপলিটন আবাসিক এলাকার গ্রীণ বাংলা জাহানারা অ্যাপার্টমেন্টের সপ্তম তলায় একটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে বিপুল অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
অস্ত্রশস্ত্রের মধ্যে আছে, ৫টি একে ২২, ১টি বিদেশি পিস্তল, ১টি একনলা বন্দুক, ১টি এলজি, একে ২২ এর ১০টি ম্যাগজিন, ১টি পিস্তলের ম্যাগজিন, ২ হাজার ১৫৫ রাউণ্ড পয়েন্ট টুটু বোরের গুলি, ৫০১ রাউণ্ড শটগানের গুলি উদ্ধার করে র্যাব।র্যাব-৭ এর অধিনায়নক লে.কর্ণেল মিফতাহ উদ্দিন আহমদের দাবি, একে ২২ অস্ত্রগুলো চীন থেকে ভারতের মিজোরাম হয়ে বাংলাদেশে এসেছে। আর পিস্তলগুলো ভারত থেকে কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে চট্টগ্রামে এসেছে।
র্যাব জানায়, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হাটহাজারি উপজেলার আল মাদরাসাতুল আবু বকর থেকে গ্রেপ্তার হওয়া ১২ জন, ২১ ফেব্রুয়ারি বাঁশখালীর লটমণি পাহাড় থেকে গ্রেপ্তার হওয়া ৫ জন, ২৮ ফেব্রুয়ারি নগরীর হালিশহর থানার একটি আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনসহ মোট ২৪ জন ‘শহীদ হামজা ব্রিগেডের’ সদস্য বলে জানিয়েছেন র্যাব অধিনায়ক। তবে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্যে তিনি এ পর্যন্ত শহীদ হামজা ব্রিগেডের ২৫ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করলেও হিসাব দিতে পেরেছেন ২৪ জনের।
মিফতাহ বলেন, শহীদ হামজা ব্রিগেডের তিনটি সামরিক উইংয়ের নেতৃত্ব দেন আজিজ ওরফে তারিক ও মনির ওরফে মাসুদ ওরফে ডন। এদের মধ্যে আজিজ গ্রেপ্তার হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, বাঁশখালীর লটমণি পাহাড় ছিল শহীদ হামজা ব্রিগেডের সামরিক প্রশিক্ষণ ঘাঁটি। সেখানে প্রত্যেক সদস্য ১০ রাউণ্ড করে গুলি ছুঁড়ে প্রশিক্ষণ নিত। এর মধ্যে ৬ রাউণ্ড গুলি ছোঁড়া হত একে ২২ থেকে আর ৪ রাউণ্ড ছোঁড়া হত অন্যান্য অস্ত্র থেকে। ২০১৪ সালের শেষদিকে তারা লটমণি পাহাড়ে সামরিক প্রশিক্ষণ শুরু করে বলে তিনি দাবি করেন।
নতুন জঙ্গি সংগঠনের ‘অর্থদাতা’র খোঁজ নেয়া হচ্ছে জানিয়ে মিফতাহ বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা পাঁচটি ব্যাংক অ্যাকাউণ্টের সন্ধান পেয়েছি। এগুলো বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করা হয়েছে। তবে তাদের লেনদেন মূলত হত হুন্ডির মাধ্যমে।আটক জঙ্গিদের কাছে বেশকিছু নথিপত্রও পাওয়া গেছে। এসব নথিপত্রে কিভাবে ছদ্মাবেশ ও ছদ্মপরিচয় ধারণ করবে, কাউকে অনুসরণ করা কিংবা তাকে কেউ অনুসরণ করছে কিনা সেটা নজরে রাখা, ধরা পড়লে জিজ্ঞাসাবাদে কোন তথ্য না দেয়ার কৌশলের বিষয়টি লেখা আছে। এছাড়া মোবাইল, ট্যাবসহ আরও কিছু সামগ্রী জঙ্গিদের কাছে পাওয়া গেছে।
র্যাব অধিনায়ক বলেন, চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা শহীদ হামজা ব্রিগেডের আরও বেশকিছু সদস্য আছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।