ঢাবির ছাত্রী হল ছাত্রলীগের কাছে জিম্মি
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৪১:০৪,অপরাহ্ন ১২ এপ্রিল ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের আবাসিক হলসমূহে মেধাতালিকা অনুযায়ী সিট বরাদ্দ দেয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত সুফিয়া কামাল হল যেন ভিন্ন। ছাত্রলীগের আদেশই সেখানে নিয়ম। নবনির্মিত এই হলটিতে ইতোমধ্যে ছাত্রলীগের মাধ্যমে ৩ শতাধিক ছাত্রীকে অবৈধভাবে হলে উঠানো হয়েছে। ছাত্রলীগের কর্মীদের থাকার ব্যবস্থা করতে বৈধ শিক্ষার্থীদেরও হল থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
ভর্তি পরীক্ষার মেধাতালিকায় এগিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের ক্রমান্বয়ে আসন বরাদ্দ দেয়ার কথা থাকলেও তা অনুসরণ করছে না হল প্রশাসন। এমনকি ছাত্রলীগের মেয়েদের সিটে উঠানোর জন্য হলে অবস্থানরত বৈধ ছাত্রীদের সিট থেকে নামিয়ে দেয়া হচ্ছে। সর্বশেষ গত ৭ এপ্রিল একসঙ্গে ৭ জন আবাসিক ছাত্রীকে হল থেকে নামাতে বাধ্য হয় হল প্রশাসন।
ঘটনাসূত্রে জানা যায়, গত ১ এপ্রিল মেধাতালিকার ভিত্তিতে ৭ জন ছাত্রীকে আসন বরাদ্দ দেয় হল প্রশাসন। এর এক সপ্তাহ পর হল অফিস থেকে তাদের সিট ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। নেমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে কোন যৌক্তিক ব্যাখ্যা তাদের দেয়া হয়নি। পরবর্তীতে হলের প্রভোস্ট দাবি করেন, এসব ছাত্রীদের আসন বরাদ্দের ব্যাপারে তিনি ওয়াকিফবহাল ছিলেন না। তাই তাদের নামিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের দাবি তাদের আবাসিক শিক্ষকরাই তাদের আসন বরাদ্দ দিয়েছে।
সূত্র জানায়, হলের গণরুমগুলোতে অবৈধ উপায়ে থাকা পলিটিক্যাল ছাত্রীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তাদের সিটের ব্যবস্থা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ছাত্রলীগের। হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ছাত্রলীগের মাধ্যমে হলে উঠা অবৈধ ছাত্রীর সংখ্যা ৩’শ ছাড়িয়ে গেছে। এরপর প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১০-১৫ জন করে ছাত্রী অবৈধভাবে হলে উঠাচ্ছে ছাত্রলীগ নেত্রীরা।
হলে অবৈধ উপায়ে গণরুমে অবস্থানরত ছাত্রীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তাদের সিটে উঠাতে হল প্রাধ্যক্ষকে চাপ প্রয়োগ করে হল ছাত্রলীগ। পরবর্তীতে ছাত্রলীগের কর্মীদের সিটে উঠানোর জন্য গত ৭ এপ্রিল ওই ৭ জন আবাসিক ছাত্রীকে হলের সিট থেকে নামিয়ে দেয় হল প্রাধ্যক্ষ। এবং ওইসব সিটে ছাত্রলীগের কর্মীদের থাকতে দেয় হল প্রশাসন।
এরপর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের শরণাপন্ন হলে তাদের হলের একটি গণরুমে থাকতে দেয় হল কতৃপক্ষ। কিন্তু এরইমধ্যে ওই গণরুমও ছাত্রলীগের মেয়েদের দখলে চলে গেছে।
হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন, হলের নিয়মিত বেতন পরিশোধ করা বৈধ শিক্ষার্থীদের চেয়ে বেতন পরিশোধ না করা ছাত্রলীগের কর্মীদের অগ্রাধিকার বেশি?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আবাসিক ছাত্রী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য ছাত্রী হল সমূহে ছাত্রলীগের জন্য আলাদা করে কিছু রুম রাখা হয়। সেগুলোকে তারা গণরুম হিসেবে ব্যবহার করে। কিন্তু আমাদের হলে (কবি সুফিয়া কামাল হল) প্রতিটি রুমে ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণ। হল প্রশাসন যেন ছাত্রলীগের কাছে অসহায়।
ছাত্রলীগের হল সেক্রেটারির তিলোত্তমা শিকদার বলেন, প্রক্টর স্যার রুল করে দিয়েছেন ৫০ ভাগ ছাত্রী হল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে উঠবে। আর বাকি ৫০ ভাগ উঠবে ছাত্রলীগের মাধ্যমে। আমরা আমাদের ৫০ ভাগ উঠাই না।
এ ব্যাপারে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক নীলুফার বানু বলেন, যে ৭ জন মেয়েকে বের করে দেয়া হয়েছে তাদের নিয়ে হলে ঝামেলা সৃষ্টির সম্ভাবনা ছিল তাই তাদের বের করে দেয়া হয়েছে।