ঝড় মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি নেই বিদ্যুত বিভাগের : ১৫০ কিলোমিটার গ্রিড লাইন ঝুঁকিপূর্ণ, দুর্ভোগে ২ লক্ষাধিক গ্রাহক
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:৫৮:২১,অপরাহ্ন ১৭ এপ্রিল ২০১৫
নিউজ ডেস্ক :: মৌলভীবাজার পিডিবি’র আওতাধীন জেলার ৭ উপজেলায় দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য আগাম কোনো প্রস্তুতি না থাকায় দুর্ভোগে রয়েছেন ২ লক্ষাধিক গ্রাহক। দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে ৫ লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করে লুটপাট হলেও ১৫০ কিলোমিটার লাইন রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ। মৌলভীবাজার বিদ্যুত বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের ৩৩ কেভির মৌলভীবাজার-শ্রীমঙ্গল ৩০ কিলোমিটার, মৌলভীবাজার-ফেঞ্চুগঞ্জ ৪০ কিলোমিটার, কুলাউড়া-ফেঞ্চুগঞ্জ ৫০ কিলোমিটার এবং মৌলভীবাজার-কাশিমপুর ৩০ কিলোমিটারসহ মোট ১৫০ কিলোমিটার বিদ্যুতের গ্রিড লাইন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে বছরের পর বছর থেকে। বিদ্যুত বিভ্রাটের কারণে এ জনপথের প্রায় ২ লক্ষাধিক গ্রাহক সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন।
এদিকে পিডিবি’র আওতাধীন জেলার সাত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের ভেল্কিবাজিতে গ্রাহকদের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। জাতীয় গ্রিড লাইন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় ঘনঘন বিপর্যয় ঘটছে। এমন কোন দিন নেই, শহরের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়ি বিদ্যুতবিহীন থাকছে না। কোনো ধরণের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ২৪ ঘন্টায় অন্তত ১০/১৫ বার বিদ্যুত আসা-যাওয়া করে-গ্রাহকদের এমন অজস্র অভিযোগ রয়েছে। বিদ্যুত চলে গেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রচ- গরমের মধ্যে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে গ্রাহকদের। ‘বিদ্যুত যায় না মাঝে মাঝে আসে-এমন মুখরোচক কথাও শোনা যায় গ্রাহকদের কাছ থেকে। বিদ্যুতের এভাবে বার বার আসা-যাওয়ার খেলায় অনেক এলাকায় শর্ট সার্কিটে বাড়িঘর, আসবাবপত্রসহ বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি পুড়ে যাচ্ছে এবং বিনষ্ট হওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এতে লাখ লাখ টাকার ক্ষতির শিকার হয়ে থাকেন গ্রাহকরা।
এদিকে বিদ্যুত না থাকার সুযোগে এক শ্রেণীর জেনারেটর ব্যবসায়ী চড়া দামে জেনারেটর বিক্রি করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। মৌলভীবাজার পিডিবি’র আওতাধীন লাইন ত্রুটিপূর্ণ থাকায় মৌলভীবাজার সদর, কুলাউড়া, বড়লেখা, শ্রীমঙ্গল, হবিগঞ্জের বানিয়াচং ও হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় সঞ্চালন লাইন অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, মৌলভীবাজার-শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজার-কাশিমপুর ৩৩ কেভির সঞ্চালন লাইনটি হাইল হাওর ও কাউয়াদীঘি হাওরের ওপর দিয়ে টানা হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে এভাবেই রয়েছে লাইনটি। এতে বর্ষা মৌসুমে টাওয়ার প্রায় ৭-৮ ফুট কোথাও আরও বেশি পানির নিচে তলিয়ে যায়। অনেক টাওয়ার বা খুঁটির নিচের অংশ খসে পচন ধরেছে। তাছাড়া হাওরে পানি থাকায় বর্ষায় মাটি নরম হয়ে খুঁটি নড়বড়ে হয়ে যায়। সামান্য ঝড়ো হাওয়ায় খুঁটিগুলো হেলে পড়ে। কোথাও ভেঙে তার ছিঁড়ে যায়। অপরদিকে মৌলভীবাজার-ফেঞ্চুগঞ্জ ও কুলাউড়া-ফেঞ্চুগঞ্জ লাইনটি হাওর ও পাহাড়ি এলাকা দিয়ে টানা হয়েছে। ঝড়ের সময় এ লাইনের ওপর গাছ-গাছালি ভেঙে পড়ে তার ও খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ অবস্থায় তাৎক্ষণিক লাইন মেরামত দুষ্কর হয়ে পড়ে। এবার কালবৈশাখী ঝড় দেশের বিভিন্ন স্থানে আঘাত হানলেও মৌলভীবাজারে এখনও কোন ঝড়ের আঘাত আসেনি। কিন্তু আকাশে সামান্যতম মেঘ দেখলেই হলো। আর বিদ্যুত থাকে না।
মৌলভীবাজার পিডিবি’র বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের ও পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন রাজনগর, কুলাউড়া, বড়লেখা, জুড়ী, কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, বাহুবল, হবিগঞ্জ সদর, বানিয়াচং উপজেলা এবং মৌলভীবাজার জেলা সদরে বিদ্যুত গ্রাহকরা ছাড়াও ছোট-বড় কলকারখানাগুলোকে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
এদিকে বিদ্যুতের এসব সমস্যা সমাধানে প্রকল্প হাতে নিয়ে খুঁটি ও লাইন টানানোও হয়েছে। দীর্ঘদিন কুলাউড়ায় টানানো লাইনটি জনৈক প্রভাবশালী ব্যক্তির কারণে বন্ধ ছিল। পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান জানিয়ে তিনি মামলাসহ তার আপত্তি তুলে নেন। কিন্তু কবে শেষ হবে ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে বড়লেখা পর্যন্ত নতুন লাইনের এ কাজ-তা কেউ জানে না। যদিও স্থানীয় পল্লী বিদ্যুত কর্তৃপক্ষ বলছে এই লাইনটি চালু হয়ে গেলে বিদ্যুতের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবে গ্রাহকরা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মৌলভীবাজার পিডিবি’র বিদ্যুত বিভাগের অতিরিক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে খুঁটিতে স্থাপিত তার এলোমেলো হয়ে লাইনে ত্রুটি দেখা দেয়। তাই লাইন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আবার চালু করতে অনেক সময় লাগে। তাছাড়া লোকবল ও যানবাহন সংকট থাকায় কাজ করতে সরেজমিন লোক পাঠাতে অনেক ক্ষেত্রে বিলম্ব হয়।
বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দেশের পূর্বাঞ্চলের ওই উপজেলা ও জেলা সদরে প্রায় ২ লাখ বিদ্যুত গ্রাহক রয়েছেন। এর মধ্যে শুধু কুলাউড়া, বড়লেখা, জুড়ী ও রাজনগরে প্রায় ৪০ হাজার গ্রাহক আছেন। জেলার একমাত্র ফ্লাইউড কারখানা, ১২০ টি চা-বাগান ও ১টি হিমাগার হুমকির মুখে পড়েছে। এ ব্যাপারে পিডিবি’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দাপ্তরিক টিএন্ডটি নাম্বারসহ ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বার মোবাইল নাম্বারে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।